প্রতিবাদ: জেল হেফাজতে স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় মোমবাতি-প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশ। মুম্বইয়ে। ছবি—রয়টার্স।
পুলিশের হেফাজতে থেকে ধীরে ধীরে এক তীব্র যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হল ৮৪ বছর বয়সি ফাদার স্ট্যান স্বামীর। আমাদের চোখের সামনে। ঠিক যেমন কোনও দোকানের জানলায় পসরা সাজানো থাকে, আর সেগুলো এ-পার থেকে দেখি আমরা, ঠিক তেমন ভাবেই দেখলাম অশীতিপরের এই মৃত্যু। গণতন্ত্র নামক ‘বিপণি’তে।
এই মৃত্যুর জন্য দায়ী সবাই— আমাদের বিচারব্যবস্থা, পুলিশ, তদন্তকারী সংস্থা, সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। সংবাদমাধ্যমও। সবাই মামলাটি সম্পর্কে জানতেন। সকলেই তাঁর ভগ্নস্বাস্থ্যের কথাও জানতেন। কিন্তু তবু তাঁকে বন্দি করেই রাখা হয়েছিল। এই কোমল স্বভাব, রুগ্ণ অথচ দুর্দম মানুষটি মারা গেলেন রাষ্ট্রের দেওয়া ‘ষড়যন্ত্রকারী’ তকমা গায়ে এঁটে, ভীমা কোরেগাঁও মামলার ১৬ জন অভিযুক্তের অন্যতম হয়ে।
আর এক অভিযুক্ত রোনা উইলসনের ল্যাপটপে পাওয়া যে-চিঠির ভিত্তিতে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছিল, ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে, তা আসলে কারচুপি করে, তাঁর ল্যাপটপে ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে, ঢোকানো হয়। আদালত বা এ দেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলি আমেরিকান সংবাদপত্রের সেই তদন্তমূলক প্রতিবেদনকে কোনও মান্যতা দেয়নি। আজ, স্বামীর মৃত্যুর পরের দিন, ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত আর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, আর এক অভিযুক্ত সুরেন্দ্র গ্যাডলিংয়ের কম্পিউটারেও ‘তথ্যপ্রমাণ’ ঢোকানো হয়েছিল।
এ দেশে একটা আইন আছে— ‘দ্য আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ় প্রিভেনশন অ্যাক্ট’। এই আইন প্রয়োগ করে আমাদের সরকার এ দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ আইনজীবী, বিশিষ্ট জন এবং সমাজকর্মীদের আটক ও বন্দি করে রাখে। অধিকাংশ সময়ে অনির্দিষ্ট কাল। যত ক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা অসুস্থ হয়ে মারা না-যান, বা জেলে থাকতে থাকতে তাঁদের জীবনপ্রদীপ নিভে না-যায়। কেউ যদি বলেন, ইউএপিএ-র অপব্যবহার করা হচ্ছে, তা হলে তাঁরা ভুল বলছেন। এই আইনটি প্রণয়নই করা হয়েছে এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু তাই শুধু কোনও ব্যক্তি মানুষের মৃত্যু নয়। আমরা যাকে গণতন্ত্র বলে জানি, ধীরে ধীরে তার মৃত্যু। কয়েক জন পাষণ্ড আমাদের শাসন করে। তারা এই দেশে এক অভিশপ্ত সময় বহন করে এনেছে।