প্রতীকী ছবি।
উত্তরপ্রদেশ-সহ চার রাজ্যে বিজেপি জিতলেও দেশে বেকারত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন আরএসএস-এর শীর্ষ নেতৃত্ব। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় রেকর্ড বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীরা বহু দিন ধরেই সরব। এ বার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘও জানাল, অতিমারির সঙ্কটের ফলে ব্যবসা, শিল্প, পরিবহণ ক্ষেত্রে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে বেকারত্বের সমস্যা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত আমদাবাদে আরএসএস-এর অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার বৈঠক বসেছিল। তার বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকার কাজের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু বেকারত্বের চ্যালেঞ্জ অপরিসীম। সঙ্ঘের প্রতিনিধি সভার বৈঠকে প্রস্তাব পাশ করে বলা হয়েছে, শ্রম নিবিড় শিল্প, ছোট-মাঝারি শিল্প, কৃষি ভিত্তিক শিল্পে জোর দিতে হবে।
সিএমআইই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি)-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৮.১ শতাংশ। গত ছ’মাসে সর্বোচ্চ। দু’বছর আগে কোভিডের প্রথম ধাক্কার ঠিক আগের মাসে, ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে বেকারত্বের হার ছিল ৭.৭৬ শতাংশ। এখন বেকারত্বের হার তার থেকে বেশি। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস, এসপি এই বেকারত্বকে হাতিয়ার করলেও তাতে লাভ হয়নি। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে চারটিতেই বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু বিজেপি জিতলেও বেকারত্বের সমস্যা যে যাচ্ছে না, বার্ষিক রিপোর্টে তা মেনে নিয়েছে আরএসএস। সঙ্ঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোভিডের ফলে তিনটি সঙ্কট তৈরি হয়েছে। একটি বেকারত্ব। অন্য দু’টি হল, স্কুল বন্ধ থাকার ফলে পড়াশোনার ক্ষতি এবং অতিমারিতে বহু পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যু।
সঙ্ঘ সূত্রে বলা হচ্ছে, বহু বছর পরে সঙ্ঘের বার্ষিক প্রতিবেদনে বেকারত্ব নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে। সঙ্ঘের এই প্রতিবেদনে একটি ভারতীয় অর্থনৈতিক মডেলের কথা বলা হয়েছে। সূত্রের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদী সরকার এখন বিদেশি লগ্নি বা বিদেশি শিল্পসংস্থার এ দেশে শিল্পস্থাপনের উপরে জোর দিচ্ছে। তার বদলে ভারতীয় শিল্প এবং দেশি শিল্পপতিদের এ দেশে শিল্পগঠনের উপরে জোর দিতে বলার কথা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সঙ্ঘের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা মনে করে যে, একটি ভারতীয় অর্থনৈতিক মডেলের উপর জোর দেওয়া উচিত যা হবে মানবকেন্দ্রিক, শ্রমনিবিড়, পরিবেশ-বান্ধব, বিকেন্দ্রীভূত। সেখানে সুবিধার সুষম বণ্টনের উপর জোর দিতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে জোর দিতে হবে।’ সঙ্ঘ মনে করে, দেশে কারখানায় উৎপাদন বাড়লে আমদানি করা পণ্যের উপরে নির্ভরতাও কমবে।
কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতারা বলছেন, আরএসএস, বিজেপি এই বেকারত্বের সমস্যা অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু তা ধামাচাপা দিতে ভোট এলেই ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করে। ধর্মের নামে ভোটে জেতার কৌশল নেয়। কংগ্রেস নেতা অশোক গহলৌত বলেন, ‘‘মেরুকরণের রাজনীতি করা সহজ। ভোটের সময় তাই বিজেপির কাছে ধর্মের প্রশ্ন সামনে চলে আসে। চাকরির অভাব, মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা পিছনে চলে যায়।’’
বস্তুত, সঙ্ঘের বার্ষিক প্রতিবেদন শুধু বেকারত্বের সমস্যার কথা বলে থামেনি। তার সঙ্গে ‘সংবিধান ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়ছে’ বলেও রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে অবশ্য সঙ্ঘের নিজস্ব তত্ত্ব অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। মুসলিমদের দিকে ইঙ্গিত সঙ্ঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় সরকারি শাসনযন্ত্রে প্রবেশ করার বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়েছে’। পঞ্জাব, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশে পরিকল্পিত ভাবে হিন্দুদের ধর্মান্তরণ করা হচ্ছে বলেও সঙ্ঘের রিপোর্টে দাবি। একে পরিকল্পিত শক্তি দিয়ে ঠেকানোরও ডাক দিয়েছে আরএসএস। সঙ্ঘের এই দাবিকে নিশানা করে আজ সিপিএমের পলিটব্যুরো বিবৃতি দিয়ে বলেছে, সংখ্যালঘুদের নিশানা করার এটি আরেকটি পরিকল্পনা। আরএসএস আসলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ আরও তীব্র করতে চাইছে।
বঙ্গের সমালোচনা
অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী হিংসার সমালোচনা করল আরএসএস। সঙ্ঘের বার্ষিক প্রতিবেদনের বক্তব্য, সমাজে হিংসা, আতঙ্কই বাড়লে শুধু যে অস্থিরতা তৈরি হবে, তা নয়, গণতন্ত্রও ধ্বংস হবে। আরএসএস-এর মতে, প্রশাসনের অপব্যবহার করে, হিংসাকে খোলা ছুট দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে শেষ করার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে তার মূল্য চোকাতে হবে। এক রাজ্যের মানুষকে নিরাপত্তার জন্য অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে, এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা নয়, গণতন্ত্র ও সংবিধানেরও লঙ্ঘন।
নিজস্ব সংবাদদাতা