শুক্রবার কৃষি আইন প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে বদলে গেল সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনের ছবি।
শুক্রবার কৃষি আইন প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে বদলে গেল সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনের ছবি। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এ বার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এল লোকসভা এবং রাজ্যসভায় তিনটি আইন প্রত্যাহার করা এবং সেই সংক্রান্ত রাজনৈতিক চাপানউতোর। অধিবেশন শুরু ঠিক ন’দিন আগের পূর্বাভাস, শীতকালীন সংসদ উত্তপ্ত হবে কৃষি আইন এবং তার জেরে সাড়ে সাতশোরও বেশি কৃষকের মৃত্যু নিয়ে।
মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে কি বিরোধী ঐক্য জমাট বাঁধার সুযোগ পাবে? রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি নির্ভর করছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদ পূর্ববর্তী নয়াদিল্লি সফরের উপরে। তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধীর কথা হয় কি না, হলেও তার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যায়, তার উপরে অনেক কিছুই নির্ভর করবে। তবে আপাত ভাবে এটা স্পষ্ট, বিরোধী দলগুলি নিজের মতো করে রাজ্যসভা এবং লোকসভায় সরকারকে বিঁধবে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, “আইন প্রত্যাহার করতে হলেও সংসদের দুই কক্ষে আলোচনা করতে হয়। আমরা সেই আলোচনার সুযোগ নিয়ে সরকারের কাছে জানতে চাইব, সাড়ে সাতশো মানুষের প্রাণহানি হল কেন? কে এই পরিবারগুলির দায়িত্ব নেবে? কেন্দ্র কী ভাবে তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে?” পাশাপাশি লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অবশ্যই কৃষি আইন নিয়ে সরকারের মুখোশ খুলে ফেলার জন্য বক্তৃতা করার সুযোগ পাওয়া যাবে আসন্ন অধিবেশনে। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি।”
যে দিন সংসদ শুরু হবে, অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর কলকাতায় তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। সুদীপ জানিয়েছেন, সেখানেই মমতা নির্দেশ দেবেন এ বারের সংসদীয় রণকৌশলের বিষয়ে। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন সুদীপ। তবে তৃণমূল সূত্রের ইঙ্গিতে স্পষ্ট, কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের একযোগে কৃষক স্বার্থে সুর চড়ানোর সম্ভাবনা যথেষ্ট কম। গত কাল সকাল থেকেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে বারবার এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তারাই প্রথম সংসদের ভিতরে ও বাইরে তিন নয়া কৃষি আইন নিয়ে সরব ও আক্রমণাত্মক হয়েছিল। এই আইন সংক্রান্ত বিলটি ছিঁড়ে ফেলা থেকে শুরু করে পোস্টারের বয়ান ঠিক করা, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় তা লেখা, ধর্নার কর্মসূচি স্থির করা, সংসদ চত্বরে গোটা রাতের অভূতপূর্ব অবস্থান এবং দোলা সেন-সহ তৃণমূল সাংসদদের গান— সবেতেই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব। আজ সেই আইন মোদী সরকার ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হওয়ার পরে, কংগ্রেসের সঙ্গে সেই কৃতিত্ব ভাগ করে নিতে চাইবে না তৃণমূল। প্রসঙ্গত, সিংঘুর কৃষক আন্দোলনই হোক বা লখিমপুর খেরির কৃষক হত্যার ঘটনা, কৃষি-জয়েও
ধন্দে ঐক্য।
আলাদা করে মমতা তাঁর নেতাদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন। নিজে ফোনে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলনে উৎসাহ দিয়েছেন।
অন্য দিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস কী ভাবে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে রাজ্যসভার প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। আগে এই নিয়ে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হোক।” কংগ্রেস সূত্রের মতে, অবশ্যই আলোচনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা মোদী সরকারের ঘাড়ে সাড়ে সাতশোরও বেশি কৃষকের শহিদ হওয়ার দায় চাপাতে চাইবে। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “যাঁরা বঞ্চিত এবং নিপীড়ত হচ্ছেন তাঁদের কথা তোলার জন্যই তো সংসদে যাওয়া। আমি সরকারের কাছে মৃত সাড়ে সাতশো কৃষক পরিবারের ক্ষতিপূরণের আবেদন জানানো লোকসভায়। পাশাপাশি তাঁদের শহিদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি তুলবো।” পাশাপাশি লখিমপুর খেরির বিষয়টি নিয়েও যে কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রচারে এবং সংসদের ভিতরে গলা তুলবে, তা দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার লাগাতার টুইট এবং বক্তব্য থেকে প্রমাণিত। কংগ্রেস সূত্রের মতে, উত্তরপ্রদেশে তারা যে হেতু একা লড়ছে, ফলে কৃষকদের লাভ ক্ষতি নিয়ে এসপি বা আরএলডি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংসদীয় কৌশল তৈরি করার প্রশ্ন উঠছে না।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বিজু জনতা দল এবং শরদ পওয়ারের এনসিপি কী করে, সে দিকেও নজর থাকবে। গত বছর কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের প্রবল প্রতিরোধের মধ্যে সরকার যখন কৃষি বিল পাশ করায়, এই দু’টি দলের বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়নি। তারা কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিলও হয়নি। এসপি, শিবসেনা ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারাও কৃষক মৃত্যুর জবাবদিহি চেয়ে মোদী সরকারের কাছে জানতে চাইবে, আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে কেন এত দেরি করা হল?