পদ্মেশ্বর গোয়ালা এবং জয়া প্রভা বোরা। —নিজস্ব চিত্র।
“অচিনাকি ভনটি জনি, না জানু কত ঘর, আছে নাকি কোনো বা তোমার মরমর.....”।
বাংলা করলে গানের মোদ্দা মানে দাঁড়ায়, ও অচেনা বোনটি, তোমার প্রেমিক আছে কী? যদি না থাকে, আমি তোমার প্রেমে পড়েছি....
গান শেষ করতেই হেসে গড়ান একাত্তুরে তরুণ প্রেমিক। পাশে সাদা জমি- সোনালি জরির শাড়িতে মুখ ঢাকেন সলজ্জ ৬৫!
ঘটা করে, পুরোহিত ডেকে বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে দুইজনের। নিস্তরঙ্গ বৃদ্ধাবাসে আজ আর বাত-পিত্ত-কফের রোজনামচা নেই, নেই কাছের মানুষ পাশে না থাকার চেনা হাহাকারও। বদলে, ষাটোর্ধদের একান্নবর্তী পরিবারটা যেন রসে-বশে-আহ্লাদে যৌবন ফিরে পেয়েছে।
পাঁজি দেখে বিয়ের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ঘোষণা হওয়ার পরেই উলুধ্বনিতে মুখরিত গুয়াহাটির বেলতলায় থাকা প্রমোদ তালুকদার স্মৃতি বৃদ্ধাবাস।
পদ্মেশ্বর গোয়ালা (৭১) আর জয়া প্রভা বোরা (৬৫)- কারও আগে বিয়ে হয়নি। পদ্মেশ্বরের জীবনে প্রেম অবশ্য এসেছিল একবার। কিন্তু মনের মানুষের বিয়ে হয়ে যায় অন্যত্র। তাই আর কাউকে মন দেননি এতদিন। জয়ার বিয়ের ইচ্ছে থাকলেও পাকেচক্রে হয়ে ওঠেনি। চার হাত এক হওয়ার এই প্রক্রিয়া দুইজনের কাছেই নতুন। ফলে ক্যালেন্ডারে বয়স বাড়লেও বিয়ের রোমাঞ্চ তাঁদের ঘায়েল করেছে সেই অষ্টাদশী আবেগেই।
বৃদ্ধাবাসের প্রতিষ্ঠাতা উৎপল হর্ষবর্ধন জানান, গোলাঘাটের বোকাখাতের বাসিন্দা পদ্মেশ্বর গত ৮ মাস এখানে আছেন। তিনি অনাথ। ছোট থেকে অন্যের বাড়িতে পরিচারকের কাজ করেছেন। আর গলায় তুলেছেন একের পর এক গান। তেজপুরের জয়া দুই ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে বছর খানেক আগে এই বৃদ্ধাবাসে আসেন। শুধু গানই নয়, কোনও স্বজন না থাকার শূন্যতাও দুই মনকে কাছাকাছি নিয়ে আসে।
জয়াপ্রভার অবশ্য কিছুদিন আগে ঠিকানা বদল হয়েছে। কারণ একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকা মহিলাদের বৃদ্ধাবাস মাতৃ আবাসে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। সেখানেই বিয়ের আসর বসবে। কোনও সঙ্কোচ নয়, রীতিমতো ব্যান্ডপার্টি নিয়ে বর যাবেন বিয়ে করে। ইতিমধ্যেই বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রীতিভোজে শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে কেউ চাল, কেউ ডাল দেওয়ার কথা আগাম জানিয়ে রেখেছেন। উৎপল জানান, বিয়ের পরে তাঁদের জন্য প্রমোদ তালুকদার বৃদ্ধাবাসেই আলাদা একটি ঘর দেওয়া হবে।
অসমীয়া ও হিন্দি গানে আবাস মাতিয়ে রাখা পদ্মেশ্বর বলছিলেন, “প্রেম তো বয়স বা টাকা দেখে হয় না। হয়ে যায়। আর আমাদের দুইজনের জবাবদিহি করার মতোও কেউ নেই।"
কিন্তু কী ভাবে হল এই প্রেম? পদ্মেশ্বরের সলজ্জ জবাব, “গান তো কতই গাইতে থাকি। কিন্তু তার মধ্যে এই একটা গান শুনে ও প্রেমে পড়ে গেল!” কথা শুনে হাসির ছররা। মুখ ঢাকেন হবু স্ত্রী জয়া প্রভা।
বাকি আবাসিকরা উগরে দেন গোপন কথা- প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেদের ডাকনামও দিয়েছেন। কী সেই নাম? সকলের আবদারে প্রথমে আড় ভাঙেন জয়াই। বলেন, আই লাভ ইউ ‘বাবু’। বিগলিত বাবুও ফিরিয়ে দেন পাল্টা আদর- আই লাভ ইউ টু ‘জান’।