রাসায়নিক কারখানায় গ্যাস লিকে অসুস্থদের চলছে উদ্ধার কাজ। ছবি- এএফপি।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের একটি রাসায়নিক কারখানা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বিষাক্ত গ্যাস লিক হয়ে এক শিশু-সহ মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। ঘটনার জেরে আশেপাশের এলাকার প্রায় ১০০০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে বিশাখাপত্তনমের কিং জর্জ হাসপাতালে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দল সেখানে পৌঁছে উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে।
বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ শহরতলির কাছে গোপালপত্তনম এলাকায় রয়েছে এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামের ওই রাসায়নিক কারখানা। মূলত পলিয়েস্টার পলিথিন তৈরি হত ওই কারখানায়। সেই কাজে ব্যবহার করা হত স্টাইরিন নামের গ্যাস। যা মানব শরীরের পক্ষে বিষাক্ত।
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ ওই কারখানা থেকে গ্যাস লিক শুরু হয়। সে সময় কারখানায় ছিলেন শুধু নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই গ্যাস লিক হওয়ায় অচৈতন্য হয়ে পড়েন তাঁরা। ফলে তখন খবর দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর পর গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে লোকালয়ে। সাড়ে ৪টের দিকে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের চোখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে থাকে। যার জেরে ঘুম ভেঙে যায় অনেকের। খবর যায় পুলিশে। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধারের কাজে নামে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড রাসায়নিক কারখানা থেকে চলছে গ্যাস লিক। ছবি- রয়টার্স।
এই ঘটনায় প্রায় ১০০০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২০০ জনকে কিং জর্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আট জন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। অসমর্থিত সূত্রের খবর, দশজনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর এক অফিসার জানিয়েছেন, সোশ্যাস ডিসট্যান্সিং বজায় রেখে কাজ করার জন্য উদ্ধার কার্য চালাতে দেরি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গ্রেটার বিশাখাপত্তনম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন টুইট করে জানিয়েছে, ‘‘গোপালপত্তনমে এলজি পলিমার কারখানায় গ্যাস লিক করেছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে না বেরোতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’’ অন্ধ্রপ্রদেশের ডিজিপি ডিজি সায়াং বলেছেন, ‘‘এলাকা খালি করে উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে। দেশ জুড়ে লকডাউনের জন্য বন্ধ ছিল ওই কারখানা।’’
গ্যাস লিক পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনার ছবি-ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। কারখানার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস। সেই গ্যাস শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বহু মানুষ। অসুস্থ হয়ে রাস্তাতেই পড়ে থাকতে দেখা যায় বহু মানুষকে। তাঁদের কেউ বমি করছেন। কেউ ছটফট করছেন। কেউ বা নিথর হয়ে পড়ে আছেন রাস্তার মধ্যে। বহু মানুষকে দেখা যাচ্ছে, মাস্ক পরেই তাঁরা বোঝাচ্ছেন শ্বাস কষ্টের কথা। এক জন যুবতী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গ্যাস লিকের জেরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনীও নেমেছে উদ্ধার কার্যে। অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
গ্যাস লিকের জেরে পরিস্থিতি যাদের সঙ্কটজনক, এ রকম ৮০ জনকে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেটরে। এখনও অবধি ১১ জনের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হলেও, সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে এই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি অসুস্থদের দেখতে কিং জর্জ হাসাপাতালে যান।। তিনি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন বলেও জানিয়েছেন। গ্যাস লিকের খবরে বিস্মিত কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী কংগ্রেস কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন সেখানকার অসুস্থ মানুষজনকে সহযোগিতার জন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বিশাখাপত্তনমের মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টির দিকে তিনি নজর রাখছেন বলেও জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ৯৯ দিনে দেশে করোনা আক্রান্ত ছাড়াল ৫০ হাজারের গণ্ডি, মৃত ১৭৮৩
আরও পড়ুন: ‘বিপদ বুঝলেও আম আদমির কথা ভাবেননি মোদী’