ফাইল চিত্র।
আকবর রোডের ২৪ নম্বর বাংলো চত্বরে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিলই। কংগ্রেস হাইকমান্ডের কি আর দলের উপরে ‘কমান্ড’ নেই? জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগের পর সচিন পাইলটের ‘বিদ্রোহ’ এবার সেই প্রশ্নটাই ভরা হাটে এনে ফেলল।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরাবরই দলের সংস্কৃতির অঙ্গ। নবীন-প্রবীণ ভারসাম্য বজায় রেখে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ধামাচাপা দিয়ে রাখার কাজটিই এত দিন কংগ্রেস হাইকমান্ড ওরফে সনিয়া গাঁধী করে এসেছিলেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সভানেত্রী হিসেবে সনিয়া গাঁধীর পক্ষে আর তা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রাহুল গাঁধীকে সামনে রেখেই কংগ্রেসের প্রবীণ ব্রিগেডের সঙ্গে নবীন ব্রিগেড লড়াই শুরু হয়েছিল। সচিন পাইলটের বিদ্রোহের পর কংগ্রেস নেতারা বলছেন, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পর থেকে এই নবীন-প্রবীণ বিভাজন ধীরে ধীরে মুছতে মুছতে, এখন নতুন বিভাজন তৈরি হয়েছে। যার এক দিকে রাহুল গাঁধী। তিনি এআইসিসি-তে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালকে সামনে রেখে দলকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্য দিকে কংগ্রেস কোষাধ্যক্ষ আহমেদ পটেল ও তাঁর শিবির। রাহুলের শিবিরে শুধুই নবীনেরা, আহমেদের শিবিরে শুধুই প্রবীণ— এই সুস্পষ্ট বিভাজন আর নেই। তার নুমনা হল, এক সময় রাহুল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সচিন পাইলট জয়পুর থেকে দিল্লি এসে আহমেদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু রাহুল গাঁধীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়নি। অন্য দিকে একদা আহমেদ-শিবিরের নেতা বলে পরিচিতি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত এখন রাহুলের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন: দু’টি বড় পরীক্ষার ফল ঘোষণার পরে কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তির দাবি
রাহুল শিবিরের ব্যাখ্যা, এই টানাপড়েনের মধ্যেই রাহুল ক্রমশ নতুন প্রজন্মের নেতাদের তুলে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাজস্থানে অশোক গহলৌত-সচিন পাইলট সংঘাতে রাহুলের শিবির বলছে, গহলৌত সংগঠনের নিচু তলা থেকেই উঠে এসেছেন। সচিন ২০০৩-এ দলে যোগ দিয়ে ২০০৪-এ মাত্র ২৬ বছর বয়সে সাংসদ হয়েছেন। তার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, এখন উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদে। ফলে সুযোগ বা ক্ষমতা তিনি পাননি, এই ব্যাখ্যা ভুল।
আরও পড়ুন: বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রক
এই টানাপড়েনে কংগ্রেসে আরও ভাঙন ধরবে কি না, তা নিয়ে রবিবার থেকেই কপিল সিব্বলের মতো নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন। সোমবার কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর, কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার মনে করিয়ে দিয়েছেন, দল যাতে আরও দুর্বল না-হয়ে পড়ে, সেটাই আসল। বিদ্রোহ করলেও শিবকুমারের আশা সচিন দায়িত্বশীল কংগ্রেস নেতা। সাত-আট বছর ধরে রাজস্থানে কংগ্রেসকে দাঁড় করিয়েছেন। সচিন দল ছাড়বেন না। তারুরের মতে, “দেশের সত্যিই একটা উদারবাদী দল দরকার, যার নেতৃত্বে মধ্যপন্থী, বহুত্ববাদ, সকলকে নিয়ে চলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী পেশাদার রাজনীতিকরা থাকবেন। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবার উচিত কংগ্রেসকে দুর্বল না-করে মজবুত করতে কাজ করা।”
কিন্তু তরুণদের যে কোণঠাসা অবস্থা, সেই ক্ষোভ চাপা দিয়ে রাখা যাচ্ছে না। পি চিদম্বরমের পুত্র, লোকসভার সাংসদ কার্তির যুক্তি, “প্রতিভাবানদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় বলেই গুগল সফল। এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে কংগ্রেসকে।’’