কাফিল খান।— ফাইল চিত্র
হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে পর পর দু’দিনে ষাটের বেশি শিশুর মৃত্যু। বছর দু’য়েক আগে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরের বাবা রাঘব দাস মেডিক্যাল কলেজের (বিআরডি হাসপাতাল) এই ঘটনা দেশ জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। সেই কাণ্ডে ওই হাসপাতালেরই চিকিৎসক কাফিল খানকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু, তার দু’বছরের মাথাতেই ঢোঁক গিলতে হল উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কাফিল খানকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় সমস্ত বড় ধরনের অভিযোগ থেকেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েই ফুঁসে উঠেছেন ওই চিকিৎসক। যোগী সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে সিবিআই তদন্তেরও দাবি তুলেছেন।
বছক দু’য়েক আগে বিআরডি হাসপাতালের যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলার মতো মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল, বৃহস্পতিবার সেই কাফিল খানকেই প্রায় সব অভিযোগ থেকেই রেহাই দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। ওই দিনই ১৫ পাতার ওই রিপোর্ট কাফিল খানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিলেই সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেন তদন্তকারী আইএএস অফিসার হিমাংশু কুমার। কী বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে? তদন্ত রিপোর্ট জানাচ্ছে, কাফিল খান কর্তব্যে অবহেলা দেখাননি। তিনি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াতেও যুক্ত ছিলেন না। অক্সিজেন যে বাড়ন্ত তাও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। তদন্ত রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে, বিপর্যয়ের সময় নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে হাসপাতালের সাতটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছিলেন চিকিৎসক কাফিল খান। তবে, সরকার প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও তিনি ২০১৬ সালের অগস্ট মাস পর্যন্ত তা চালু রেখেছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
দু’বছর আগে বিআরডি হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিল উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার। আর সমস্ত বিপর্যয়ের জন্য কাফিল খানকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, অক্সিজেনের যে অভাব ঘটতে পারে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাননি তিনি। ২০১৭ সালের ১০ এবং ১১ সেপ্টেম্বর বিআরডি হাসপাতালে ৬০-এর বেশি শিশুর মৃত্যু ঘটেছিল। ওই কাণ্ডের পর হাসপাতাল পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সেই সময় তড়িঘড়ি সাসপেন্ড করা হয় কাফিল খানকে। তার কিছু দিনের মধ্যে গ্রেফতারও করা হয় তাঁকে। কাফিল খান-সহ ন’জনে বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
আরও পড়ুন: সময় চাইলেন মুকুল, মির্জা হেফাজতে থাকার সময়ই জেরা করতে চায় সিবিআই
হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর পর ঘটনাপ্রবাহ যখন এমন খাতে বইছে, তখন প্রকাশ্যে আসে ভিন্ন খবরও। জানা যায়, বিআরডি হাসপাতালে এমন বিপর্যয়ের মুহূর্তে অন্যান্য শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কাফিল খানই। তাই তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় যোগী সরকারকে। আট মাস জেলে থাকার পর, গত বছর এপ্রিল মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে জামিন পান কাফিল। আদালত জানিয়ে দেয়, কাফিলের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ মেলেনি। এর পর রাজ্য সরকারের তদন্ত রিপোর্টেও সেই একই কথা বলা হয়েছে।
দু’বছর বাদে শাপমুক্তি। মাথার উপর থেকে অভিযোগের পাহাড় সরে যাওয়ার পর কাফিল খান বলেন, ‘‘সব সময়ই জানতাম, আমি কোনও অপরাধ করিনি। দুর্ঘটনার দিন এক জন চিকিৎসক, এক জন বাবা এবং এক জন ভারতীয় হিসাবে আমি আমার সেরাটা দিয়েছি। শিশুদের বাঁচানোর জন্য আমার চেষ্টা সত্ত্বেও আমাকে গরাদের পিছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। সংবাদ মাধ্যম আমার দুর্নাম করেছে। আমার পরিবারকে দুর্বিষহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং আমাকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: সিবিআই কর্তার বিরুদ্ধে ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি অধস্তনের
জেলে থাকার স্মৃতি তুলে ধরে কাফিল বলেন, ‘‘যখন আমাকে গ্রেফতার করা হয় তখন আমার মেয়ের বয়স ছিল ১০ মাস। যখন আমি জামিন পেলাম এবং বাড়ি ফিরে এলাম তখন ও আর আমাকে চিনতে পারছিল না।’’ অভিযোগের সুরে কাফিল বলেন, ‘‘সরকার এখনও পর্যন্ত ওই ঘটনার মূল অপরাধীকে খুঁজে পায়নি। আমাকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে। এত মাসেও আমাকে রিপোর্ট পাঠানো হয়নি। এখন মেডিক্যাল এডুকেশন দফতর আমার বিরুদ্ধে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এই ট্র্যাজেডির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্কই নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারের উচিত ক্ষমা চাওয়া। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত করা।’’