ঘুটঘুটে অন্ধকারে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে গেলে একটু হলেও গা ছমছম করবে। চোখের ভ্রমে অনেক সময় মনে হতে পারে, কেউ বুঝি পিছু পিছু আসছে! তবে এখন দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে, কিন্তু এখনও এমন জায়গা বা রাস্তা রয়েছে যেখানে সকালবেলা গেলেও গা শিউরে উঠবে।
দেশেরই নানা প্রান্তে এমন বেশ কিছু রাস্তা রয়েছে যেগুলিকে ‘ভুতুড়ে’ বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। তাঁরা ওই রাস্তাগুলি এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করেন।
কাসারা ঘাট— মুম্বই-নাসিক হাইওয়ের উপর পড়ে এই জায়গাটি। দাবি করা হয়, কাসারা ঘাট দিয়ে যাঁরাই গিয়েছেন, তাঁদেরই নাকি ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে।
কাসারা ঘাটে বহু দুর্ঘটনা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, খুন করার পর খুনিরা লাশ গুম করার জন্য এই জায়গাকেই বেছে নেয়। তাই এই জায়গা খুন হওয়া ব্যক্তিদের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হিসেবে পরিচিত। বহু গাড়িচালক আবার দাবি করেছেন, এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মুণ্ডহীন মহিলাকে দেখতে পেয়েছেন, সঙ্গে শুনেছেন অট্টহাস্যও।
তবে যাঁরা গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করতে ভালবাসেন, যাঁরা প্রকৃতিপ্রেমী, তাঁদের কাছে এই জায়গা লোভনীয়। দু’পাশে সবুজের সমারোহ, তার বুক চিরে চলে গিয়েছে মুম্বই-নাসিক হাইওয়ে।
ব্লু ক্রস রোড— চেন্নাইয়ের সবচেয়ে ‘ভুতুড়ে’ রাস্তা হিসেবে মনে করা হয় ব্লু ক্রস রোডকে। রাস্তার দু’পাশ গাছের চাদরে ঢাকা। তাই দিনের বেলাতেও অন্ধকার থাকে এই রাস্তা। রাতের ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
ব্লু ক্রস রোডে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। স্থানীয়দের দাবি, রাতে এই রাস্তায় নাকি অশরীরীরা হেঁটে বেড়ায়। তাই রাতেরবেলা ভুলেও এই রাস্তা ব্যবহার করেন না প্রায় কেউই।
কাসেরি ঘাট— মুম্বই-গোয়া হাইওয়েতে গোয়া যাওয়ার পথে পড়ে কাসেরি ঘাট। রাতে এই রাস্তা নাকি এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। দাবি করা হয়, কাসেরি ঘাটের কাছে আচমকাই বন্ধ হয়ে যায় গাড়ির ইঞ্জিন। শুধু তাই-ই নয়, এই রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
ইস্ট কোস্ট রোড— চেন্নাই থেকে পুদুচেরি যাওযার সময় এই রাস্তা পড়ে। দুই লেনের এই রাস্তা নাকি এত মসৃণ যে, গাড়িচালকরা গতি বাড়ানোর লোভ সামলাতে পারেন না। এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা সবুজের সমারোহ। কিন্তু লোভনীয় এই দৃশ্যের আড়ালে রয়েছে অন্য কাহিনি।
সূর্যাস্তের পর নাকি ইস্টকোস্ট রোড এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে এই রাস্তায়। দাবি করা হয়, এই রাস্তায় নাকি এক মহিলাকে সাদা শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সে চালকদের বিভ্রান্ত করে। যার ফলে অনেকই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। শুধু তাই-ই নয়, এই রাস্তায় হঠাৎ করে তাপমাত্রা নেমে যায়।
সত্যমঙ্গলম অভয়ারণ্য করিডর— তামিলনাড়ুর এই অভয়ারণ্যের বুক চিরে চলে গিয়েছে ২০৯ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি অংশ। এই জঙ্গলেই এক সময় চন্দনদস্যু বীরাপ্পনের গড় ছিল। এই রাস্তার দু’পাশের দৃশ্য মুগ্ধ করার মতো। কিন্তু তামিলানাড়ুতে এই রাস্তাকে ‘ভুতুড়ে’ বলে মনে করা হয়।
স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকরা দাবি করেন, রাতে এই রাস্তা দিয়ে গেলেই নাকি বিকট চিৎকার শোনা যায়। নানা রকম ‘ভুতুড়ে’ কাণ্ড ঘটতে থাকে। বিশ্বাস, চন্দনদস্যু বীরাপ্পনের আত্মা নাকি এখানে ঘুরে বেড়ায়।
দিল্লি-জয়পুর হাইওয়ে— রাজস্তানের জয়পুর থেকে অলওয়ার যেতে গেলে এই হাইওয়ে পড়ে। এই রাস্তা ধরে আবার ভানগড় দুর্গেও যাওয়া যায়। এখানে অদ্ভুত কিছু ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন অনেকেই। যার উত্তর তাঁরা খুঁজে পাননি। আর সেই ঘটনা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তেই রাতে এই রাস্তায় অনেকেই যেতে সাহস পান না।
দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট রোড— রাতে এই রাস্তা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, এই রাস্তায় নাকি এক মহিলাকে দেখা যায়, যিনি হঠাৎই উধাও হয়ে যান। ওই মহিলা কে, তার কোনও হদিস আজ পর্যন্ত মেলেনি। কেউ কেউ আবার এমনও দাবি করেছেন, ওই মহিলা চালকদের গাড়ি থামাতে বলেন। কেউ যদি না থামিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যান, মহিলাকেও সেই গতিতে নাকি পাশাপাশি ছুটতে দেখা যায়।
রাঁচী-জামশেদপুর ৩৩ নং জাতীয় সড়ক— এই রাস্তাতে অস্বাভাবিক ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে। যার উত্তর আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই রাস্তাতেই দু’টি মন্দির পড়ে। বিশ্বাস, কোনও চালক যদি সেই মন্দিরের সামনে না থামেন এবং প্রার্থনা না করেন, তা হলে সেই গাড়ি ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এমনই হয় বলে দাবি স্থানীয়দের।
মার্ভ অ্যান্ড মাধ আইল্যান্ড রোড— মুম্বইয়ের এই রাস্তায় নাকি এক নববিবাহিতার আত্মা ঘুরে বেড়ায়। দাবি, অনেকেই নাকি নতুন বৌয়ের বেশে এক মহিলাকে দেখতে পেয়েছেন। তার সঙ্গে শুনতে পেয়েছেন বিকট চিৎকারও। কেউ আবার ঝুমুর পরে চলার শব্দও নাকি শুনতে পান। এই রাস্তার একটি কাহিনি আছে। এক ব্যক্তি তাঁর নববিবাহিতা স্ত্রীকে এই রাস্তায় নিয়ে এসে খুন করেন। তার পর থেকেই রাস্তাতে নাকি ওই মহিলার আত্মা ঘুরে বেড়ায়।