নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ
রুটিরুজির সমস্যা নিয়ে মানুষের অসন্তোষ জমা পড়ছে ভোটের বাক্সে। কিন্তু দলিত বা মুসলিম পরিচিতির ভিত্তিতে ভোট চাওয়া দলগুলি ভাগ বসাচ্ছে সেই বিরোধী ভোটে। আর তাতেই সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে বিজেপি। দেশের একাধিক রাজ্যের এই প্রবণতা মহারাষ্ট্রে ফের দেখা দেওয়ায় চিন্তায় কংগ্রেস-এনসিপি থেকে বাম দলগুলি।
মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের ফলাফল বলছে, অন্তত ২৫টি আসনে বাবাসাহেব অম্বেডকরের পৌত্র প্রকাশ অম্বেডকর ও আসাদউদ্দিন ওয়াইসি-র দল ভাগ বসিয়েছে কংগ্রেস-এনসিপির ভোটে। আর তার সুবিধা পেয়েছে বিজেপি-শিবসেনা। এই ২৫টি আসন কংগ্রেস-এনসিপির ঝোলায় গেলে রাজ্যে ভোটের ফল অন্য রকম হত। কারণ মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা জোট পেয়েছে ১৬১টি আসন। কংগ্রেস-এনসিপি জোট জিতেছে ৯৮টি আসনে। ২৫টি আসনের ফল অন্য রকম হলে ২৮৮ আসনের বিধানসভায় বিজেপির জোট বিপাকে পড়ত। আসন সংখ্যার ভিত্তিতে তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলত কংগ্রেস-এনসিপি জোট।
মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁওয়ে পেশোয়াদের বিরুদ্ধে দলিতদের বিজয় দিবস উদ্যাপনের সময় অম্বেডকরপন্থীদের উপরে আক্রমণ হয়। অম্বেডকরের পৌত্র প্রকাশ অম্বেডকর বিজেপি-শিবসেনা সরকারকে ‘নয়া পেশোয়া’ আখ্যা দিয়ে তাকে হারানোর ডাক দিয়েছিলেন। ‘বঞ্চিত বহুজন অঘাড়ি’ দল গড়ে ভোটেও নেমেছিলেন। ২৮৮টি আসনের মধ্যে তাঁর দল প্রায় আড়াইশো আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। একটি আসনে না জিতলেও তিনি কংগ্রেস-এনসিপি-র ভোটে ভাগ বসিয়েছেন। এনসিপি নেতা তথা বিধায়ক জিতেন্দ্র আওহদের ক্ষোভ, ‘‘অঘাড়ি আমাদের ভোটে ভাগ বসানোয় কংগ্রেস ১২টি এবং এনসিপি ১১টি আসন খুইয়েছে।’’ ওয়াইসি-র এমআইএম দু’টি আসন জিতেছে। কিন্তু নাগপুর সেন্ট্রাল ও উত্তর নানদেড় আসনে এমআইএম বিজেপি-শিবসেনাকে সুবিধা করে দিয়েছে। এর সঙ্গে বিদর্ভে মায়াবতীর বিএসপি-ও বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়েছে।
বিজেপিই পিছন থেকে এই দলগুলিকে আর্থিক ও সাংগঠনিক মদত দিচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসুর প্রশ্ন, ‘‘একটা রাজ্যে প্রায় আড়াইশো আসনে ভোটে লড়তে কত অর্থ প্রয়োজন হয়? প্রথম বার ভোটে লড়তে নামা একটা দলের কাছে এত টাকা এল কোথা থেকে?’’ নীলোৎপল মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কংগ্রেস-এনসিপি প্রকাশের দলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যেতে চাইলেও তিনি অবাস্তব সংখ্যক আসন দাবি করেছিলেন।
কংগ্রেস-এনসিপি-বাম শিবিরের মতে, রাজনৈতিক দিক থেকেও এর মোকাবিলা হওয়া প্রয়োজন। এই দলগুলি দলিত, মুসলিম পরিচিতি-সত্তার রাজনীতি বা ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’ করছে। দলিত, মুসলিমরা মনে করছেন, এরাই বিজেপিকে হারাবেন। কিন্তু এরা আখেরে বিজেপিকেই সুবিধা করে দিচ্ছেন। নীলোৎপলের মতে, সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলেই এই দলগুলিকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে। প্রকাশ অম্বেডকরের পাল্টা যুক্তি, ‘‘আমরাই বঞ্চিত সম্প্রদায়ের অধিকারের জন্য জন্য লড়াই করব। মানুষের সমস্যা, সামাজিক ন্যায়ের জন্য আমাদের লড়াই আরও জোরদার হবে। কোনও আসনে না জিতলেও আমরা গোটা রাজ্যে ২৪ লক্ষ ভোট পেয়েছি। দশটি আসনে আমরা দ্বিতীয় স্থানে। আগামী দিনে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আমরা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেব।’’