ফাইল চিত্র।
প্রসঙ্গ ছিল ওবিসি বিল। উঠে এল পেগাসাস থেকে কৃষি আইন।
ওবিসি বিলে বিরোধীরা সমর্থন জানানোয় আজ সংসদের বাদল অধিবেশনে প্রথম বার সুষ্ঠু ভাবে আলোচনা হল। সেই সুযোগে কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস, অকালি দল থেকে বাম সাংসদেরা লোকসভায় দাঁড়িয়ে পেগাসাস আড়ি পাতা কাণ্ড থেকে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করলেন। এই অস্বস্তি এড়াতেই এত দিন মোদী সরকার সংসদে পেগাসাস কাণ্ডে তদন্ত বা কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়নি। ফলে গত তিন সপ্তাহ সংসদ অচল হয়ে থেকেছে। আজ সুযোগ পেয়ে বিরোধীরা তার সদ্ব্যবহার করল।
ওবিসি বিল নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আজ লোকসভায় কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুললেন, পেগাসাস নিয়ে আলোচনা করতে সরকার কেন ভয় পাচ্ছে? অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কৌর কৃষক আন্দোলনে মৃত চাষিদের ছবি নিয়ে, সিপিআই সাংসদ এম সেলভারাজ প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, মোদী সরকার কেন কৃষক আন্দোলন নিয়ে আলোচনায় রাজি নয়? অধীর বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সংসদ হাওয়ামহল নয়। আমরা এখানে হাওয়া খেতে আসি না। সংসদে মানুষের সমস্যা, দেশের সামনে প্রশ্ন তুলে ধরাই আমাদের দায়িত্ব। সরকার কেন পেগাসাস, কৃষক আন্দোলন নিয়ে আলোচনায় ভয় পাচ্ছে?” সুদীপ বলেন, ‘‘আমাদের দলের প্রস্তাব, আগামিকালই লোকসভায় পেগাসাস নিয়ে আলোচনা হোক।’’ হরসিমরতের অভিযোগ, দেশে ‘স্বৈরতন্ত্র’ চলছে। তাই সরকার যা চায়, সংসদে শুধু তা নিয়েই আলোচনা হয়।
সরকার, বিরোধী সব দলের সমর্থনে আজ লোকসভায় সংবিধানের ১২৭তম সংশোধনী বিল পাশ হয়ে গিয়েছে। বুধবার রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হবে। এই বিল পাশ হলে সংবিধানের ১০৫তম সংশোধন হবে। কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কাছেও যে ওবিসি তালিকা তৈরির ক্ষমতা রয়েছে, তা নিশ্চিত করতেই মোদী সরকার এই বিল নিয়ে এনেছিল। বিজেপি ওবিসি-দের সংরক্ষণের সুবিধা নিশ্চিত করে উত্তরপ্রদেশের ভোটে ফায়দা তুলতে চাইছে দেখে আজ বিরোধীরা বিজেপিকে পাল্টা প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করেছে। কংগ্রেস, শিবসেনা, এসপি-সহ বিরোধীরা দাবি তুলেছে, মহারাষ্ট্রে মরাঠাদের মতো অনগ্রসর শ্রেণির জন্য চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়তি আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করা হোক।
আজ লোকসভায় বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বীরেন্দ্র কুমার যুক্তি দেন, রাজ্যগুলির ওবিসি তালিকা তৈরির ক্ষমতা নিশ্চিত করতেই এই বিল। কারণ মরাঠা সংরক্ষণ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, শুধুমাত্র কেন্দ্রের হাতেই ওবিসি নির্ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। তার ফলে রাজ্যগুলির ওবিসি তালিকা মুছে গিয়ে ৬৭১টি সম্প্রদায়, ওবিসিদের পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষের সংরক্ষণের আওতা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী এই সমস্যার জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করেন। তাঁর অভিযোগ, মোদী সরকার এখন ‘কেঁচে গণ্ডূষ’ করছে। ২০১৮-য় সংবিধান সংশোধন করে জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার সময়েই কংগ্রেস সতর্ক করেছিল, এর ফলে কেন্দ্রের হাতেই ওবিসি নির্ধারণের ক্ষমতা রয়েছে বলে ভুল বার্তা যাবে। সুপ্রিম কোর্টে সেটাই হয়েছে। কেন্দ্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিরোধীদের কথায় কান দেয়নি।
এর পরেই অধীর, শিবসেনার বিনায়ক রাউত, এসপি-র অখিলেশ যাদব দাবি তোলেন, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকা আরও অনগ্রসর শ্রেণিকে সংরক্ষণের সুবিধা দিতে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করা হোক। ইন্দ্র সাহনে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছিল। তার ভিত্তিতেই মহারাষ্ট্রে মরাঠাদের জন্য সংরক্ষণও সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। অধীরদের দাবি, কেন্দ্রের যখন এতই ওবিসি-প্রীতি, তা হলে ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করা হোক। অখিলেশ জাতিগণনার দাবিও তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে এসপি সরকার ক্ষমতায় আসছে। কেন্দ্র জাতিগণনা না করালে এসপি সরকার করাবে।’’
বিরোধীদের জবাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বীরেন্দ্র কুমার বলেছেন, ইউপিএ সরকার ২০১১-য় জাতিগণনা করালেও তা প্রকাশ করেনি। তবে মোদী সরকার তা প্রকাশ করবে, এমন কোনও আশ্বাস তিনি দেননি। সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করার প্রশ্নে তাঁর জবাব, সরকার অনগ্রসরদের দাবি সম্পকর্কে সহানুভূতিশীল। প্রায় ৩০ বছর আগে এই ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তাই এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।