দেশের প্রতিটি রাজ্যে এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা কত, সেই সংক্রান্ত একটি ‘এস্টিমেটেড রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে ন্যাকো।
অঙ্ক কী কঠিন! ন্যাকোর (ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন) হিসাব বলছে, পশ্চিমবঙ্গে এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্তের সংখ্যা হওয়া উচিত ১ লক্ষ ৪৪ হাজার। কিন্তু রাজ্যের এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) কেন্দ্রগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩৮, ৯১০। তাহলে বাকিরা গেলেন কোথায়? বিশ্ব এইডস দিবসে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
সম্প্রতি ঝুঁকিসম্পন্ন জনগোষ্ঠী এবং সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রতিটি রাজ্যে এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা কত, সেই সংক্রান্ত একটি ‘এস্টিমেটেড রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে ন্যাকো। ওই রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু-সহ সবক’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা কত হতে পারে, তা-ও বলা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো আর কোনও রাজ্যে তফাৎ এত বেশি নয়। মহারাষ্ট্রের এআরটি কেন্দ্রের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২,৪৫,০৩২। ন্যাকোর রিপোর্ট বলছে সংখ্যাটা হবে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার। এআরটি কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তামিলনাড়ুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১,১৬,৪৬৯। ন্যাকোর ‘এস্টিমেটেড রিপোর্ট’ অনুযায়ী সংখ্যাটা ১ লক্ষ ৪২ হাজার। অন্ধ্রপ্রদেশে এআরটি’র হিসাব হল, ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৪২। ন্যাকোর রিপোর্ট বলছে দু’লক্ষ ৭০ হাজার।
‘স্টেট এডস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি’তে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক সরকারি চিকিৎসক রবিবার বলেন, ‘‘আক্রান্ত কত রয়েছে জনসংখ্যার নিরিখে তার অঙ্ক কষে হিসাব করেছে ন্যাকো। উল্টোদিকে রাজ্যের তথ্য নির্ভর করছে এআরটি সেন্টারগুলিতে কত জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। ন্যাকোর হিসাব ঠিক নাও হতে পারে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩৮,৯১০ জন, এটাও হয়তো কোথাও একটা ভুল হচ্ছে!’’
আরও পড়ুন: চিৎকার বন্ধ করতে চিকিৎসকের মুখে ঢালা হয়েছিল মদ! তেলঙ্গানায় ধর্ষণকাণ্ডে বিস্ফোরক তথ্য
এই পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনার ঘাটতি অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জাতীয় উপদেষ্টা চিকিৎসক স্মরজিৎ জানা। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের যে সকল জায়গাগুলি ঝুঁকিসম্পন্ন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত সেখানে দীর্ঘদিন ধরে আগের মতো এইচআইভি পরীক্ষা করার কর্মসূচি হচ্ছে না। যৌনকর্মীদের গ্রাহকদেরও পরীক্ষা করতে হবে এবং সেটা সম্ভব।’’ স্মরজিৎবাবু জানান, ন্যাকোর অনুমানভিত্তিক হিসাব সত্যি হলে তা খুব উদ্বেগের। এইচআইভি পজিটিভদের চিহ্নিত করা না গেলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
‘ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার’এ কর্মরত কাউন্সিলরদের একাংশ আবার সমস্যার অন্য দিক তুলে ধরেছেন। তাঁদের বক্তব্য, নাম পরিচয় গোপন রাখলেও সরকারি হাসপাতালে রক্তপরীক্ষার জন্য প্রকাশ্যে লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই। যার প্রেক্ষিতে অনেকে বেসরকারি পরীক্ষাগারগুলিতে রক্তপরীক্ষা করাচ্ছেন। সেই তথ্য ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। ন্যাকোর তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতি বছর রাজ্যে গর্ভবতী মায়ের সংখ্যা ১৫ লক্ষ। সব গর্ভবতী মায়ের এইচআইভি পরীক্ষা করানো হয়। ফলে রাজ্যের তথ্য নির্ভুল বলেই মনে হয়।’’
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় জানান, ন্যাকোর নির্দেশিকা মেনে কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে রাজ্য। তাঁর কথায়, ‘‘২০০৫ সালের পর থেকে রাজ্যে এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। ন্যাকোর হিসাব ঠিক কি না তা তথ্য বিশ্লেষণ না করে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’