ছবি: সংগৃহীত।
বিহারে অশোক চৌধরি। ঝাড়খণ্ডে অজয় কুমার। ত্রিপুরায় প্রদ্যোৎ দেববর্মণ। হরিয়ানায় অশোক তানওয়ার।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া একা নন। সাম্প্রতিক অতীতে এঁরা সকলেই একে একে কংগ্রেস ছেড়েছেন। কেউ অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। কেউ আবার রাজনৈতিক ভাবে নিষ্ক্রিয়। এঁদের মধ্যে আরও মিল হল, এঁরা সকলেই কংগ্রেসে রাহুল গাঁধীর শিবিরের নেতা বলে পরিচিত ছিলেন। উত্তরপ্রদেশে জিতিন প্রসাদ, মহারাষ্ট্রে মিলিন্দ দেওরার মতো রাহুল শিবিরের তরুণ নেতারাও এক সময় দল ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন। আবার অসমে হিমন্তবিশ্ব শর্মার মতো নেতারা রাহুলের দিকেই আঙুল তুলেই দল ছেড়েছেন।
এ বার সচিন পাইলট যে কংগ্রেস ছাড়তে চলেছেন, তা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে দলের অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে, এই ভাঙন কবে বন্ধ হবে? তরুণ, প্রতিভাবান নেতাদের ধরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে না কেন? কেন উল্টে প্রবীণদের চাপের মুখে তরুণ নেতাদের কোণঠাসা হতে হচ্ছে? কেনই বা তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে?
এই প্রশ্নের মুখে আজ সনিয়া গাঁধীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, সচিনের বিরুদ্ধে দলের শীর্ষনেতৃত্ব শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে দলে নবীন, প্রবীণ সকলকেই দরকার। সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। দলের স্বার্থ ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। যে যত প্রতিভাবানই হোন বা পার্টির জন্য পরিশ্রম করে থাকুন, দলে ন্যূনতম অনুশাসন মেনে সকলকেই চলতে হবে। এই নীতি মেনেই সচিন নিজে দল না ছাড়লে তাঁর বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপের কথা ভাবছে কংগ্রেস। রাজস্থানে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত হবে। শৃঙ্খলা ভাঙলে কংগ্রেস যে এ বার কড়া মনোভাব নেবে, তা বুঝিয়ে দলের মুখপাত্র সঞ্জয় ঝা-কে আজ সাসপেন্ড করা হয়েছে। নেতৃত্বের সঙ্কট নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় মুখপাত্রের তালিকা থেকে বাদ পড়লেও তিনি নিয়মিত দলীয় কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন।
সচিন এখনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্ট করেননি। আজ তিনি শুধু সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতৃত্ব মানছে, সচিন ২০১৮-র রাজস্থান বিধানসভা ভোটের পাঁচ বছর আগে থেকেই মাঠে নেমে পড়েছিলেন। বসুন্ধরা রাজে সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবাদ করেছেন। পুলিশের লাঠি খেয়েছেন। সংগঠন গড়ে তুলেছেন। পূর্ব রাজস্থানে গুজ্জর-মিনা সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে তাঁদের ভোট কংগ্রেসের ঝুলিতে টেনে এনেছেন। কিন্তু তা বলেই তাঁর দাবি মেনে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না বলেই কংগ্রেস নেতৃত্বের মত। কারণ, অশোক গহলৌতও দলের নিচুতলা থেকে উঠে এসেছেন। সিংহভাগ বিধায়ক তাঁকেই মান্য করেন।
কংগ্রেসের অন্দরমহলে নবীন বনাম প্রবীণ ব্রিগেডের লড়াই এখন রাহুল গাঁধী বনাম আহমেদ পটেলের শিবিরের লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সচিন-সিন্ধিয়ার মতো রাহুল-ঘনিষ্ঠদের দল ছাড়ার পরেও কংগ্রেস নেতাদের ব্যাখ্যা, রাহুল নিজের মতো করে নিচুতলার লড়াকু নেতাদের তুলে আনার চেষ্টা করছেন। এক সময় তিনিই প্রবীণ ব্রিগেডের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। এখন তিনিই গহলৌতের মতো প্রবীণদের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। তাই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর দাবিতে আপস করেননি। আবার সচিনের বদলে রাজস্থানের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে গোবিন্দ সিংহ ডোটাসরাকে বসানো হয়েছে। যিনি সাত বছর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে কাজ করে এসে তিন বার বিধায়ক হয়েছেন।
রাজস্থানে যেমন গহলৌতের সঙ্গে সচিনের সংঘাত, অসমে তেমন তরুণ গগৈয়ের বিরুদ্ধে হিমন্তবিশ্ব বিদ্রোহ করেছিলেন। তরুণ গগৈ আজ সচিনকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘ধৈর্য্য ধরতে হবে। আবেগে ভাসলে চলবে না। আমার সামনেও এমন বাধা এসেছে। কিন্তু ধৈর্য্য ধরায় ফল মিলেছে। ক্ষমতার পিছনে ছুটে লাভ নেই। ও এমনিই আসবে।’’ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহর মন্তব্য, ‘‘সিন্ধিয়া-সচিন এঁরা কি কম সুযোগ পেয়েছেন? দলের জন্য যতই পরিশ্রম করুন, শৃঙ্খলা তো মেনে চলতেই হয়।’’
প্রবীণরা যা-ই বলুন, নবীন নেতাদের সকলে যে সন্তুষ্ট নন, তা স্পষ্ট। উত্তরপ্রদেশের জিতিন প্রসাদের মন্তব্য, ‘‘সচিন পাইলট শুধু সহকর্মী নন, আমার বন্ধুও। কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে এত বছর ধরে তিনি মনপ্রাণ দিয়ে দলের জন্য কাজ করেছেন। আশা করেছিলাম, পরিস্থিতি সামলানো যাবে। দুঃখের বিষয়, তা হল না।’’