পিকে’কে নিয়েও কংগ্রেসের ‘আঠারো মাসে বছর’-এর সংস্কৃতিই বজায় রইল! ফাইল চিত্র।
সিদ্ধান্ত নিতে কংগ্রেসের ‘আঠারো মাসে বছর’-এর সংস্কৃতিই বজায় রইল।
প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ দেবেন কি না, যোগ দিলে তাঁর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা বজায় রইল। উল্টে প্রশান্তকে নিয়ে আজ সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কংগ্রেসের এক ডজন নেতানেত্রীর বৈঠকে দু’রকম মত উঠে এল। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা, অম্বিকা সোনিরা বললেন, প্রশান্ত কিশোরকে দলে নিয়ে, তাঁর কথা মতো এগোতে হবে। উল্টো দিকে দিগ্বিজয় সিংহ, জয়রাম রমেশ, মুকুল ওয়াসনিকের মতো নেতারা যুক্তি দিলেন— প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে সমান্তরাল ব্যবস্থা চালু করতে চাইছেন। তাতে সমস্যা হবে। তৃণমূল কংগ্রেস, তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি-র সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ফলেও স্বার্থের সংঘাতও দেখা দেবে।
প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে এই অস্পষ্টতা রেখেই আজ সনিয়া গান্ধী ‘এমপাওয়ার্ড অ্যাকশন গ্রুপ, ২০২৪’ নামের একটি নতুন কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর কাজ হবে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা। কিন্তু প্রশান্ত কিশোর এই কমিটিতে থাকবেন কি না, সে বিষয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব কোনও উত্তর দিতে পারেনি। উত্তর মিলেছে— এই কমিটির সদস্য কারা হবেন, সে বিষয়ে সনিয়া এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।
ভোটকুশলী কিশোর কংগ্রেসের পুনরুত্থানের জন্য যে দাওয়াই বাতলেছিলেন, তা খতিয়ে দেখতে সনিয়া একটি আট সদস্যের কমিটি তৈরি করেছিলেন। কমিটি চার দিন আগেই রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। আজ সেই কমিটির সদস্য ও আরও কিছু নেতানেত্রীর সঙ্গে সনিয়া দশ জনপথে বৈঠক করেন। তাঁদের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই দ্বিমত উঠে আসে। প্রিয়ঙ্কা, অম্বিকাদের মত ছিল, নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর নানা চেষ্টা হলেও লাভ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে প্রশান্তের পরামর্শ মেনে এগোতে দোষ নেই। কিন্তু দিগ্বিজয়, মুকুল, জয়রাম, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালারা প্রশান্তের পরিকল্পনা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব নেন। এ কে অ্যান্টনি, কে সি বেণুগোপালরা ভাল ও মন্দ দুই দিক নিয়েই আলোচনা করেন।
কংগ্রেসের বক্তব্য, এই আলোচনার ভিত্তিতেই ‘এমপাওয়ার্ড অ্যাকশন গ্রুপ, ২০২৪’ নামের কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। কংগ্রেসের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে দ্বিমত থাকলেও তাঁর দাওয়াই মেনেই কমিটি তৈরি হয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, কিশোরের কংগ্রেসে যোগদান এখন সময়ের অপেক্ষা। সনিয়া আজ আলাদা ভাবে কমল নাথের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কমল নিজেও কিশোরের পক্ষে। কিন্তু কংগ্রেসের অন্য একটি সূত্র বলছে, প্রতি বারই লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের কমিটি তৈরি হয়। কখনও তার নাম হয় ‘কোর গ্রুপ কমিটি’, কখনও ‘স্ট্র্যাটেজি গ্রুপ’।
তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কথাবার্তার মধ্যেই কিশোর যে ভাবে হায়দরাবাদে গিয়ে তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) নেতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন, রাওয়ের দলের সঙ্গে ভোটকুশলী সংস্থা আইপ্যাকের চুক্তি হয়েছে, তাতে রাহুল-ঘনিষ্ঠ শিবিরেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। রাহুল ঘনিষ্ঠ, তেলঙ্গানার ভারপ্রাপ্ত নেতা মাণিকম টেগোর অর্থবহ টুইট করে প্রশ্ন তুলেছেন, শত্রুর বন্ধুকে কখনও বিশ্বাস করা উচিত নয়, এই কথা কি ঠিক? প্রশান্ত তেলঙ্গানায় টিআরএস-এর সঙ্গে কংগ্রেসকে জোট করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। মাণিকম ও তেলঙ্গানার নেতারা তা খারিজ করে দিয়েছেন। আজ আবার টিআরএস নেতা, কেসিআর-পুত্র কে টি রামা রাও কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেছেন, “কংগ্রেস এখন অচল প্রতিষ্ঠান। কংগ্রেস, বিজেপি দুই দলই মানুষকে হতাশ করেছে। কংগ্রেসের কোনও ভবিষ্যৎ দেখি না। তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কও নেই।” এই প্রেক্ষাপটে কিশোর কী ভাবে ভবিষ্যতে কংগ্রেস, টিআরএস-এর মধ্যে জাতীয় রাজনীতিতে সেতুবন্ধন করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, কিশোরকে দলে নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে উৎসাহী হলেও রাহুল গান্ধী এখন সক্রিয় ভাবে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন না। তা দেখে অনেকেই মনে করছেন, সনিয়া-রাহুল ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের কিশোরের যোগদান ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে মনস্থির করে ফেলেছেন। সনিয়ার সঙ্গে কিশোরের আর এক দফা বৈঠকের পরেই তা চূড়ান্ত হবে। ১৩ থেকে ১৫ মে রাজস্থানের উদয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের আগেই সব কিছু পাকা করে ফেলা হবে। সনিয়া
েআজ উদয়পুরে ‘নব সঙ্কল্প’ চিন্তন শিবিরে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার খসড়া প্রস্তাব তৈরির জন্য ছ’টি কমিটি গঠন করেছেন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল ও সংগঠন ঢেলে সাজানো, মজবুত করা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে। ৪০০-র বেশি কংগ্রেসের নেতা শিবিরে যোগ দেবেন।
চিন্তন শিবিরের খসড়া প্রস্তাব তৈরির কমিটিতে গুলাম নবি আজাদ, ভুপিন্দর সিংহ হুডা, শশী তারুরের মতো বিক্ষুব্ধ নেতাদেরও নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া তৈরির জন্য মল্লিকার্জুন খড়্গের নেতৃত্বে, মুকুল ওয়াসনিকের নেতৃত্বে সাংগঠনিক বিষয়ক, পি চিদম্বরমের নেতৃত্বে অর্থনীতি বিষয়ক, হুডার নেতৃত্বে কৃষি ও কৃষক, সলমন খুরশিদের নেতৃত্বে সামাজিক ক্ষমতায়ন, অমরিন্দর সিংহ রাজা ওয়ারিংয়ের নেতৃত্বে যুব বিষয়ক কমিটি তৈরি হয়েছে।