গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সংসদে বলেছিলেন, তাঁর দমবন্ধ লাগছে। তৃণমূল এবং সাংসদ পদ ছাড়ার নাটকীয় ঘোষণার পর রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে এসে দীনেশ ত্রিবেদী বললেন, ‘‘আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। এখন দল মমতার হাতে নেই।’’ পাশাপাশি নিজের টুইটার হ্যান্ডলের প্রোফাইল-ব্যানার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও সরিয়ে ফেললেন দীনেশ।
এর পর কি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ। বললেন, ‘‘রাজনীতি ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। তবে এখন নিজের সঙ্গে যোগ খুঁজব। তার পর দেখা যাবে। আমি যে দলে ছিলাম, সেটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের বদলে চলে গিয়েছিল বাণিজ্যিক সংস্থার হাতে। তেমন করে তো দল চলে না। যাদের রাজনীতি অআকখ জানা নেই, তাঁরা দল চালাবে কী করে?’’ যদিও যাঁর কাছে হেরেছিলেন লোকসভা নির্বাচনে দীনেশ, সেই অর্জুন সিংহের দাবি, বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন তৃণমূল-এর প্রাক্তন সাংসদ। ফোনে সে কথা জানিয়েওছেন অর্জুনকে।
নেটমাধ্যমে বলা দীনেশের কথা নিয়ে বুধবার থেকেই জল্পনা চলছিল। বেসরকারি পুঁজির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীর করা টুইট দীনেশ সে দিন পূর্ণ সমর্থন করে রিটুইট করেন। তা যদি দলবদলের জল্পনার প্রথম ধাপ হয়, তা হলে শুক্রবার পর পর যা ঘটল, তা ‘থ্রিলার’ জমিয়ে দিল আরও। কারণ, ইস্তফার পরেই হঠাৎ কিছু ক্ষণের জন্য দীনেশের টুইটার অ্যাকাউন্ট উধাও হয়ে যায়। ঘণ্টা খানেক পরেই ফের অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলে। তবে তত ক্ষণে অ্যাকাউন্টের ব্যানার ছবি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরে গিয়েছেন। এসেছে জাতীয় পতাকা ও স্বামী বিবেকানন্দের ছবি। কেন? জল্পনার আগুনে ঘি পড়েছে তার পরও। কারণ, এতদিন দীনেশের টুইটারে ফলোয়ার হিসাবে ছিলেন না পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ইস্তফা পরবর্তী দীনেশকে ‘অনুসরণ’ করতে শুরু করলেন তিনি।
তৃণমূলের কাছে বিষয়টি অজানা ছিল, স্বীকার করেছেন সৌগত রায়। বলেছেন, ‘‘ওঁর দলের নানা বিষয় নিয়ে ক্ষোভ হয়ত ছিল। সেটা উনি দলে বলতে পারতেন। দীনেশ দল ছেড়ে দেবেন, এই ইঙ্গিত আমরা পাইনি।’’ শুভেন্দু থেকে রাজীব, বৈশালী বা প্রবীর ঘোষালরা দল ছেড়ে অন্য দলে যাচ্ছেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই সে বিষয়টি হাওয়ায় ভেসেছিল। দলের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাতেও বসেছিলেন বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু দীনেশ ধরা দেননি। তাই হঠাৎ ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’-র লাইন আবৃত্তি করে তিনি দল ছেড়ে দেবেন, তা ধরা পড়েনি তৃণমূলের র্যাডারে।
এ দিকে বিজেপি এখন থেকেই স্বাগত জানিয়ে রাখছে দীনেশ ত্রিবেদীকে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘‘দীনেশজি অনেকটা সময় নিয়ে ফেললেন। তবে বিজেপি-তে এলে ওঁকে স্বাগত।’’ তৃণমূলকে তাঁর তোপ, ‘‘কোনও ব্যক্তি তৃণমূলে থেকে সম্মান নিয়ে কাজ করতে পারবেন না। একবার এয়ারপোর্টে আমার সঙ্গে দীনেশজির দেখা হয়েছিল। উনি বলেছিলেন, তৃণমূলে থেকে আর কাজ করতে পারছেন না। দলের অবস্থা খুব খারাপ।’’ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘দীনেশ ত্রিবেদী ভাল মানুষ। খারাপ পার্টিতে ফেঁসে গিয়েছিলেন। এখন মুক্তি চাইছেন। তৃণমূলে যে কয়েকজন ভদ্রলোক আছেন, আমার মনে হয় তাঁরাও ছেড়ে চলে যাবেন।’’