(বাঁ দিকে) দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং শরদ পওয়ার (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র।
রবিবার দুপুরে মরাঠা মুলুকে যে পালাবদল ঘটে গিয়েছে, তখনও তার আঁচ পায়নি জাতীয় রাজনীতি। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের সম্পাদককে একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) প্রধান শরদ পওয়ার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। শরদকেই তিনি দেশের বিজেপি বিরোধী ঐক্যের ‘পওয়ার’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
গত ২৯ জুন ফডণবীস সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,‘‘বিরোধীদের একজোট করছেন শরদই। যে দলগুলি একে অপরকে সহ্য করতে পারে না, তাদেরও একত্র করছেন তিনি। শরদই বিরোধী ঐক্যের চালক।’’ তবে একই সঙ্গে ফডণবীস জানান, পওয়ার তাঁর কন্যা সুপ্রিয়া সুলেকে পরবর্তী এনসিপি প্রধান হিসাবে তৈরি করছেন। এনসিপিতে পওয়ারের উত্তরাধিকার বহন করবেন সুপ্রিয়াই। এনসিপি ভাঙার তিন দিন আগে এ ভাবে পওয়ারের দলের পরিবারতন্ত্র নিয়েও মন্তব্য করেন ফডণবীস।
তিনি আরও বলেন, ‘‘পওয়ারের কিছু শারীরিক সমস্যা আছে ঠিকই। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত সচেতন। প্রতিটি দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতি বোঝেন তিনি। অন্য রাজনৈতিক দলগুলির মতো তিনিও নিজের উত্তরাধিকার নিজের পরিবারেই হস্তান্তরিত করতে চান। সুপ্রিয়াজিকে সামনে রেখে তাই তিনি এগোচ্ছেন। কন্যাকে চাইলেই তিনি দলের প্রেসিডেন্ট করে দিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। আক্ষরিক অর্থে নিজে ওই পদে রয়েছেন। তবে কার্যক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করছেন ওঁর কন্যাই।’’ উল্লেখ্য, সুপ্রিয়া এবং প্রফুল্ল পটেলকে জুন মাসেই দলের কার্যকারী প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন পওয়ার। তবে এনসিপির ভাঙনের পর প্রফুল্লকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছেন সেই পওয়ারই।
এনসিপির পরিবারতন্ত্র প্রসঙ্গে ফডণবীসের বক্তব্য, ‘‘কারও পুত্র বা কন্যার রাজনীতি করার বিরোধিতা আমরা করি না। কিন্তু কেউ শুধুমাত্র নেতার পুত্র বা কন্যা হওয়ার সুবাদে বড় পদ পেয়ে যাবেন, আমাদের আপত্তি সেখানেই। দলে যে কোনও সদস্যের পদ হওয়া উচিত তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিতেই। জন্ম বা পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে নয়।’’ পরিবারতান্ত্রিক এই রাজনীতির ক্ষতিকর দিক হিসাবে ফডণবীস জানান, এতে সরকার ওই নির্দিষ্ট পরিবারের সেবা করে। জনগণ বঞ্চিত হন। কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই ধরনের পরিবার ভিত্তিক রাজনীতি কমে এসেছে বলেও জানান ফডণবীস।
রবিবার দুপুরে আচমকা আট এনসিপি বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে গিয়ে একনাথ শিন্ডে-বিজেপি সরকারের সঙ্গে হাত মেলান শরদের ভাইপো অজিত পওয়ার। তিনিই আবার উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ঠিক এক বছর আগে জুন মাসে শিবসেনায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে মহারাষ্ট্রে ‘মহা বিকাশ আঘাডী’ সরকার ফেলে দিয়েছিলেন একনাথ শিন্ডে। বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল নতুন সরকার। যার নেপথ্যে বিজেপির ‘কলকাঠি’ ছিল বলে দাবি করে বিরোধীরা। সেই নয়া সরকারের এক বছরের মধ্যেই বিরোধী শিবিরে আবার ভাঙন ধরিয়ে দিল বিজেপি। তবে এ বার সরকার পড়েনি। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদী বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যখন এনসিপি-সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি একজোট হওয়ার সলতে পাকাচ্ছে, সেই আবহে বিজেপি সরকারে অজিতের শামিল হওয়ার ঘটনা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে।