উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য্য। ছবি সংগৃহীত।
নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে কেন নেই মাফিয়া ডন বিকাশ দুবের ছবি? কেন অন্য ধর্মের দুষ্কৃতীদের ছবি ব্যবহার হচ্ছে শুধু? কেন উত্তরাখণ্ডের ধর্ম সংসদ নিয়ে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব নিন্দা করছেন না? একের পর এক ‘অস্বস্তিকর’ প্রশ্ন ধেয়ে আসতেই আচমকা সাক্ষাৎকার বন্ধ করে উঠে পড়লেন উত্তরপ্রদেশের প্রভাবশালী বিজেপি নেতা তথা যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য্য।
ঠিক যেন ১৪ বছর আগের আর এক সাক্ষাৎকার! গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে একের পর এক প্রশ্নের মুখে আচমকাই সাক্ষাৎকার বন্ধ করে সাংবাদিককে ‘দোস্তি বনি রহে’ বলে উঠে গিয়েছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যোগী সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রীও সেই ভাবেই সাক্ষাৎকার থামিয়ে উঠে গেলেন!
কী এমন প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন মৌর্য্য যে এ ভাবে সাক্ষাৎকারই বন্ধ করে দিলেন? সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া টুকরো টুকরো ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, একটি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলের হিন্দি মাধ্যমের জন্য সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মূলত তিনটি প্রশ্নে অস্বস্তিতে পড়েই এমন করেছেন কেশব প্রসাদ। তার মধ্যে একটি ছিল মাফিয়া ডন বিকাশ দুবেকে নিয়ে। ২০২০ সালে বিকাশ দুবে ৮ জন পুলিশকে খুন করার পরে মধ্যপ্রদেশ থেকে ধরা পড়ে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ফেরানোর সময়ে ‘এনকাউন্টারে’ মারা যায় সে। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে যোগী সরকারের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনে পুলিশের এই ‘এনকাউন্টার-সাফল্যে’র কথা কেন তুলে ধরা হচ্ছে না? অস্বস্তির মুখে উত্তর এড়িয়ে যান যোগীর ডেপুটি। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তেরা বলছেন, তার কারণ বিকাশ দুবে ব্রাহ্মণ, আর সেটাই মৌর্য্যের অস্বস্তি। ঠাকুর সম্প্রদায়ের মুখ্যমন্ত্রী যোগীর জমানায় ব্রাহ্মণেরা কোণঠাসা হয়েছে বলে বারবার অভিযোগ উঠছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কংগ্রেস থেকে ব্রাহ্মণ নেতা জিতিন প্রসাদকে ভাঙিয়ে এনে মন্ত্রী করলেও ব্রাহ্মণ ভোট পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় বিজেপি। এই অবস্থায় ‘ব্রাহ্মণ-মাফিয়া’ বিকাশ দুবের ছবি দিয়ে ‘সাফল্যের’ প্রচার করতে গেলে যে হাওয়া আরও খারাপ হবে, তা বুঝেই বিষয়টি এড়িয়েছে যোগী সরকার। সাক্ষাৎকারে সেই বিকাশ দুবের প্রসঙ্গই অস্বস্তি বাড়িয়েছে মৌর্য্যের।
মৌর্য্যের ধৈর্য্যচ্যুতি হয় হরিদ্বারের বিতর্কিত ধর্ম সংসদের ঘৃণাভাষণ নিয়ে প্রশ্নেও। কেন ওই ধরনের ঘৃণাভাষণের নিন্দা করেননি কেন্দ্র বা রাজ্যের বিজেপি সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব, কেন সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করা হয়নি, কেন কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি— একের পর এক প্রশ্নে উপমুখ্যমন্ত্রী জবাব দেন, ‘‘ওঁরা যা বলেছেন ধর্মসংসদে, তা বলার অধিকার ওঁদের আছে।’’ ঘৃণাভাষণের অন্যতম পান্ডা তথা বিজেপি-ঘনিষ্ঠ স্বঘোষিত ধর্মগুরু যতি নরসিংহানন্দকে নিয়ে প্রশ্নে মৌর্য্যের জবাব ছিল, ‘‘কেউ কোনও অন্যায় কথা বলেননি, ওঁরা যেটা ঠিক মনে করেন, সেটাই বলেছেন।’’ তখনই প্রশ্ন ওঠে, কিন্তু যে ভাবে ভোটের আগে গণহত্যার ডাক দেওয়া হয়েছে..। এতেই ধৈর্য্য হারান মৌর্য্য। বলে ওঠেন, ‘‘আপনি সাংবাদিকের মতো কথা বলছেন না!’’ এর পরেই আচমকা সাক্ষাৎকার থামিয়ে দেন মৌর্য্য।