জনবিহীন রাস্তায় মোতায়েন পুলিশ। ছবি: পিটিআই।
সংঘর্ষের আবহ কেটে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব অংশ। তবে চার দিন ব্যাপী তাণ্ডবের রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। চারদিকের পরিবেশ থমথমে। দু’একটা দোকানপাট খুললেও, রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকাই। প্রয়োজন ছাড়া এখনও বাড়ির বাইরে সে ভাবে পা রাখার সাহস করছেন না সাধারণ মানুষ। তবে অফিস-কাছারি খুলে গিয়েছে।স্বাভাবিক ভাবেই কাজ হচ্ছে সেখানে।
তবে নতুন করে সংঘর্ষ না দেখা দিলেও, এখনও বেশ কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সবরকমের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ)।জায়গায় জায়গায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ এবং আধাসেনা। ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ক্রেন এবং বুলডোজার নামানো হয়েছে। হিংসা চলাকালীন বেশ কিছু এলাকায় ঘর ছেড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। সেখানে ঘরবাড়ি খালিই পড়ে রয়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদী প্রশাসন।
রাজনীতিকদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের পরেই দিল্লির পরিস্থিতি তেতে ওঠে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এলেও এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি দিল্লি পুলিশ। দিল্লি হাইকোর্ট তাদের এক মাস সময় দিয়েছে। তবে হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২৩টি এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। প্রায় ৬৩০ জনকে গ্রেফতার অথবা আটক করা হয়েছে। তবে ২৪ ফেব্রুয়ারি জাফরাবাদ-মৌজপুর পুলিশের সামনে ৮ রাউন্ড গুলি চালানোর ঘটনায় খয়েরি রঙের টি-শার্ট পরা সেই যুবকের নাগাল পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত। প্রথমে জানা গিয়েছিল ওই যুবকের নাম শাহরুখ, কিন্তু তাঁর পরিচয় নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুজরাতের মতো দাওয়াই না দিলে চলবে না! শাসানি দিল্লিতে
তবে আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার মৃত্যুর ঘটনায় আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা তাহির হুসেনের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। চাঁদ বাগ এলাকায় তাহির হুসেনের বাড়ির পাশের নর্দমা থেকে অঙ্কিত শর্মার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাহিরের লোকজনই তাঁকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছে অঙ্কিতের পরিবার। যদিও শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তাহির। কিন্তু এই অভিযোগের জেরে তাঁকে সাসপেন্ড করেছে আপ। এই মুহূর্তে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে শুক্রবার দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবিশ্বাসের পাড়ায় সন্দেহের পোড়া দাগ
শুক্রবার দিনের শেষে দিল্লিতে মৃত্যুসংখ্যা ৪২ ছুঁয়েছে। আহত অবস্থায় এখনও হাসপাতালে ভর্তি বহু মানুষ, যার মধ্যে বেশ কয়েক জন মহিলাও রয়েছেন। ঠিক কত জন মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন, হিংসা চলাকালীন তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম অভব্যতা করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে মহিলা কমিশন। বৃহস্পতিবারই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অভিযোগ সামনে এসেছে। চাঁদ বাগের বাসিন্দা রুবিনা বানো নামের ন’মাসের গর্ভবতী এক মহিলাকে তাণ্ডবকারীরা বেধড়ক মারধর করে বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দিল্লি মহিলা কমিশন।