উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
বিধায়কের স্ত্রী থাকলেও বিধায়কের দেখা নেই।
খজুরি খাসের ত্রাণ শিবিরে রবিবার সাদা প্যাকেটে নিরামিষ বিরিয়ানি বিলি করছিলেন আসমা রহমান। প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শিশু থেকে বুড়োর মুখে তবু হাসি নেই। পেটের খিদে মেটাতে প্যাকেটের জন্য হাত বাড়াতেই আসমার পাশে থাকা সাগরেদ ঘোষণা করছেন, ‘‘ইনি সীলমপুরের বিধায়ক আব্দুল রহমানের স্ত্রী। রহমান সাহেবই খানা পাঠিয়েছেন।’’ কিন্তু বিধায়ক কোথায়? প্রশ্ন করতেই অস্বস্তিতে পড়া আসমা বলেন, ‘‘দেখুন, অরবিন্দ কেজরীবালের দিল্লি সরকার হিংসায় ঘর ছাড়া মানুষের জন্য সুরাহার বন্দোবস্ত করছে। আম আদমি পার্টি সব রকম সাহায্য করছে।’’ কিন্তু বিধায়ক কোথায়? উত্তর মেলে না।
গত সোমবার থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসা ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে হিংসা কমলেও রোজই মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাংসদ বিজেপির মনোজ তিওয়ারি বা এলাকার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের কোনও বিধায়কেরই দেখা মেলেনি।
সোমবার থেকে সংসদে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে দিল্লির সংঘর্ষই প্রধান বিষয় হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ইস্তফা চেয়ে কাল থেকে শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনে সরব হবে বিরোধীরা। কিন্তু সংঘর্ষের সময় বা তার পরে উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাংসদ, দিল্লির বিজেপি সভাপতি মনোজ তিওয়ারিকেও কেউ এলাকায় দেখেননি। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়করাও গরহাজির। দেখা মেলেনি কংগ্রেসেরও।
দিল্লির হিংসা নিয়ে সংসদের দুই সভাতেই কংগ্রেস মুলতুবি প্রস্তাব দিয়েছে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের একাংশের যোগেই দিল্লিতে হিংসা ঘটেছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও ইস্তফা দেওয়া উচিত।’’ সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালের জবাব, ‘‘বিরোধীরা দিল্লি হিংসা নিয়ে নোটিস দিচ্ছে। সরকার আলোচনায় রাজি, কিন্তু এ নিয়ে রাজনীতি হওয়া উচিত নয়।’’
কিন্তু আসল সময়ে নেতারা কোথায় ছিলেন? উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। গোকুলপুরী, বাবরপুর, মুস্তফাবাদ, সীলমপুর, তিলক নগর, কারওয়াল নগর ও ঘোন্ডা। শেষ দু’টিতে বিজেপি জিতেছে। বাকি পাঁচটিই আপের দখলে। তার মধ্যে বাবরপুরের বিধায়ক গোপাল রাই দিল্লি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। কিন্তু হিংসা থামাতেই হোক বা হিংসা কবলিত এলাকার মানুষের সাহায্য, সাংসদ-বিধায়করা এগিয়ে আসেননি।
খাজুরি খাসের শ্রীরাম কলোনির ত্রাণ শিবিরের দেখভাল করছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মহম্মদ ইউনুস খান। কোনও বিধায়ক বা সাংসদ এসেছেন? ইউনুস হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘কেউ না। কারও দেখা পাইনি।’’
সাংসদ মনোজ তিওয়ারি নিহত পুলিশ কনস্টেবল রতন লালের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার থেকে এলাকায় হিংসার সময় তাঁর দেখা মেলেনি। সংবাদমাধ্যমকে তিওয়ারির যুক্তি, ‘‘পুলিশ গোটা এলাকাই ব্যারিকেড করেছিল। আমি লাগাতার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম।’’ বিজেপি নেতাদের যুক্তি, ঘোন্ডার বিধায়ক অজয় মাহাওয়ার বুধবার এক বার চাঁদ বাগে গিয়েছিলেন। গোয়েন্দা বিভাগের নিহত কর্মী অঙ্কিত শর্মার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। ওইটুকুই। কারওয়াল নগরের বিজেপি বিধায়ক বিস্ত টেলিফোন বার্তায় শান্তির আহ্বান জানান। তাঁর যুক্তি, তিনি এলাকায় গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হত।
গত মঙ্গলবার কেজরীবাল আপ বিধায়কদের এলাকায় শান্তি কমিটি তৈরির নির্দেশ দেন। কিন্তু বিধায়কদের কেউই এলাকায় ঢুকছেন না। আপের এক মুখপাত্রের যুক্তি, ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ চলছে। সংঘর্ষের সময়েও দলের মন্ত্রী-বিধায়করা সক্রিয় ছিলেন। কী ভাবে? আপ-মুখপাত্রের জবাব, ‘‘মন্ত্রী গোপাল রাই টুইট করে শান্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন। মুস্তফাবাদের বিধায়ক হাজি মহম্মদ ইউনুসও টুইট করে কোথায়, কখন সাহায্য দরকার জানিয়েছেন।’’