Anjali Singh

খুনের ধারায় মামলা চায় মৃতার পরিবার

এই দুর্ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন (৩০৪), বেপরোয়া গাড়ি চালানো (২৭৯) ও অবহেলার কারণে মৃত্যু (৩০৪ক)— এই তিনটি ধারায় মামলা করেছে দিল্লি পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫২
Share:

দিল্লিতে অঞ্জলি সিংহের মৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।

দিল্লিতে বর্ষবরণের রাতের দুর্ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের মামলা দায়ের করার জন্য দাবি তুলল মৃতার পরিবার। মৃতার মা ও মামা আরও দাবি করেছেন, এই ধারায় মামলা হোক মৃতার বান্ধবীর বিরুদ্ধেও। কালই জানা যায়, দুর্ঘটনার সময়ে ওই তরুণীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বান্ধবী নিধি। দুর্ঘটনার পরে ‘ভয় পেয়ে’ কাউকে কিছু না বলে বাড়ি চলে যান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করেছে দিল্লি পুলিশ।

Advertisement

এই দুর্ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন (৩০৪), বেপরোয়া গাড়ি চালানো (২৭৯) ও অবহেলার কারণে মৃত্যু (৩০৪ক)— এই তিনটি ধারায় মামলা করেছে দিল্লি পুলিশ। যে ধারায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে দু’বছরের কারাদণ্ড বা আর্থিক জরিমানা বা দু’টোই। কিন্তু যে ভাবে গাড়িতে আটকে যাওয়ার পরে তরুণীর আর্তনাদ উপেক্ষা করে অভিযুক্তেরা গাড়ি চালিয়ে গিয়েছে, তাতে তাদের বিরুদ্ধে কেন সরাসরি খুনের অভিযোগ (৩০২ ধারা) আনা হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার আত্মীয়েরা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০০ ধারায় পরিকল্পিত ভাবে খুনের অভিযোগ আনার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। যদিও পুলিশের বক্তব্য, নতুন কোনও প্রমাণ না আসা পর্যন্ত এটিকে পথ দুর্ঘটনা ধরেই এগোতে হবে। এখন যা তথ্যপ্রমাণ হাতে রয়েছে, তাতে ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলা দায়ের করলে তা ধোপে টিকবে না।

দিল্লি পুলিশের তদন্তের গতি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে বাহিনীর দক্ষতা নিয়েই। প্রশ্নের মুখে দিল্লি পুলিশ যার নিয়ন্ত্রণে, সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভূমিকাও। বর্ষবরণের রাতে আহত ওই তরুণীর দেহ স্থানীয় এসজিএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ওই তরুণীর উপরে কোনও যৌন নিগ্রহ হয়নি বলে দাবি করেন দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (আউটার) হরেন্দ্র কুমার সিংহ। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে কার্যত নগ্ন অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেখানে ময়নাতদন্ত না করেই কী ভাবে যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা উড়িয়ে দেন ওই অফিসার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘তরুণীর মৃত্যুর কারণ যৌন নিগ্রহ নয়, পথ দুর্ঘটনা— এ কথা বলে দিল্লি পুলিশ যে নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে তা স্পষ্ট।’’ সূত্রের খবর, ওই মন্তব্যের পরে তদন্ত থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে হরেন্দ্রকে।

Advertisement

ডিসিপি এটিকে ‘দুর্ঘটনা’ আখ্যা দেওয়ার প্রায় ২৬ ঘণ্টা পরে সরকারি ভাবে তিন চিকিৎসকের নেতৃত্বে ময়নাতদন্তের জন্য দল গড়ার কথা ঘোষণা করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, ময়নাতদন্তের জন্য দল গড়ার সিদ্ধান্ত নিতে কেন এক দিনের বেশি লাগল। আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজের কথায়, ‘‘ঘাতক গাড়িতে উপস্থিত বিজেপি নেতা মনোজ মিত্তলকে বাঁচাতে বেশি উদ্‌গ্রীব ছিল দিল্লি পুলিশ।’’ আপের অভিযোগ, ‘‘উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনা নিজে অভিযুক্তদের হয়ে তদ্বির করেছিলেন।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে কেন এক দিন লেগে গেল তা বোধগম্য নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার পরিবারের একাংশ। রাজনৈতিক ভাবে ফায়দা তুলতে উপরাজ্যপালের ইস্তফা চেয়ে সরব হয়েছেন আপ নেতৃত্ব। ফের দাবি উঠেছে, দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব দিল্লির শাসক দলের হাতে তুলে দেওয়ার। আজ মৃতার বাড়িতে গিয়েছিলেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। মৃতার মায়ের সঙ্গে আজ দেখা করেছেন নির্ভয়ার মা আশা দেবীও।

তদন্তে ঢিলে দেওয়ার অভিযোগ আরও উঠছে কাল মৃতার বন্ধু নিধির বয়ান নথিভুক্ত হওয়ার পরে। দুর্ঘটনার দু’দিন পরে পুলিশ জানতে পারে দুর্ঘটনার রাতে তরুণীর সঙ্গে নিধিও ছিলেন। নিধির বক্তব্যকে ‘ধ্রুব সত্য’ মেনে কাল ফের দুর্ঘটনার তত্ত্বে সিলমোহর দেয় দিল্লি পুলিশ। ওই বন্ধুর দাবি, সে দিন ওই তরুণী মদ্যপান করেছিলেন। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্টে পেটে মদ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন তাঁদের পারিবারিক চিকিৎসক। আজ ফের নিধিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। বর্ষবরণের রাতে কেন এলাকায় পুলিশ টহল ছিল না, কেন ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় কোনও পিসিআর ভ্যান গাড়িটিকে আটকায়নি, প্রশ্ন তুলেছেন দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার নীরজ কুমারও। ওই রাস্তায় সব ক’টি সিসিটিভি কাজ করেনি কেন, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

মন্ত্রকের কর্তাদের পর্যবেক্ষণ, গোড়া থেকেই বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় শামিল ছিলেন পুলিশের কিছু অফিসার। কী কারণে তা করা হচ্ছিল, সে বিষয়ে সবিস্তার রিপোর্ট দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার শালিনী সিংহকে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের মতে, রিপোর্ট আসার পরে কোপ পড়তে পারে কিছু পদস্থ কর্তার উপরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement