বিক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের সমর্থনে ধর্নায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। ছবি: পিটিআই
অশান্তি থামার কোনও লক্ষণ নেই। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজধানীর ছাত্র আন্দোলন বরং ক্রমশই আরও জমাট বাঁধছে। জামিয়া মিলিয়ার প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন সাড়া দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সোমবার বিকেলে বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে ইন্ডিয়া গেটের সামনে দু’ ঘণ্টার প্রতীকী ধর্নায় বসলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী।
সোমবার সকালে জামিয়ার ছাত্রদের সমর্থনে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাডোয়া কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ওই ক্যাম্পাস। বেলা বাড়তে, পথে নামে কলকাতার যাদবপুর বিদ্যালয় ও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের ছাত্ররাও। ছাত্র নিগ্রহের প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড হাতে পথে নামতে দেখা গিয়েছে আমেদাবাদ আইআইএম-এর পড়ুয়াদেরও। এই মুহূর্তে হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি মাদ্রাজ, পুদুচেরি বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয় আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি-সহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জামিয়ার সমর্থনে একজোট হয়ে আন্দোলনে শামিল।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গত পাঁচদিন ধরেই সরব জামিয়ার ছাত্রছাত্রীরা। রবিবার তাঁরা পথে নামলে রাজপথে ধুন্ধুমার বাধে। বহু বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, উন্মত্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিও চালায় পুলিশ। তার রেশ ধরেই রাতে ফের গোলমাল বাধে জামিয়ার ক্যাম্পাসে। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ প্রোক্টর ওয়াসিম আহমেদ খানের অভিযোগ, রবিবার রাতে দিল্লি পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। ছাত্রদের নির্বিচারে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আহত ছাত্রদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। আটক করা হয় ১০০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রীকে।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই জড়ো হতে থাকে দেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। ওই রাতেই জামিয়া মিলিয়ায় পৌঁছে যান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পড়ুয়া। রাতারাতি জামিয়ার ছাত্রদের পাশে থাকার বার্তা আসে বহু ক্যাম্পাস থেকেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও জামিয়ার ছাত্রদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। ছাত্রছাত্রীদের মুক্তির দাবিতে সরব বহু নাগরিক দিল্লি পুলিশের সদর দফতর ঘেরাও করেন।
আরও পড়ুন:কার নির্দেশে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকেছিল? প্রশ্ন তুলে জামিয়ার আন্দোলনের পাশে দাঁড়াল বামেরা
রাতের বেলাতেই আইআইটি বোম্বে, জেএনইউ, যাদবপুর, পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একজোট হয়ে ‘পুলিশি জুলুমের’ প্রতিবাদ কর্মসূচির পরিকল্পনা করেন। সকাল হতেই চেনা ছবিগুলি বদলতে থাকে ক্যাম্পাসগুলির। ক্লাস বয়কট করেন মুম্বইয়ের টাটা ইন্সটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের ছাত্ররা। ক্লাস বয়কট করে চেন্নাই, মুম্বই আইআইটির ছাত্ররাও। রাস্তায় নেমে পড়েন হায়দরাবাদের মৌলনা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও বারাণসীর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
সোমবার সকালে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে পুলিশ এফআইআর করে। তার পরেই নতুন করে অশান্তি শুরু হয়। ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ান রাজনৈতিক দলগুলিও। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় পথে নেমে খালি গায়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন জামিয়ার ছাত্ররা। হিংসা এড়াতে তড়িঘড়ি প্যাটেল চক, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট, ও উদ্যোগ ভবন মেট্রো স্টেশনও সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। জামিয়া সংলগ্ন মথুরাপুর অঞ্চলে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখে দিল্লির ট্রাফিক পুলিশ।
আরও পড়ুন:জামিয়ার আঁচ লখনউয়ে, ক্যাম্পাস আটকে বিক্ষোভ থামানোর চেষ্টা, ইটবৃষ্টি পুলিশের দিকে
জামিয়া মিলিয়ার রবিবারের ঘটনার আঁচ পড়ে উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়েও। আলিগড় ক্যাম্পাসে রবিবারই রাত ১১টা নাগাদ ছাত্র বনাম পুলিশ সংঘর্ষ বাধে। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, আলিগড়ে ৩০ জন ছাত্র ও ১০ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রবিবার রাতে পুলিশ বনাম ছাত্র খণ্ডযুদ্ধ বাধে পটনা বিশ্ববিদ্যালয়েও। পটনায়, আলিগড়ে গুজব রুখতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদসংস্থা সূত্রের খবর, অতর্কিতে পুলিশি আক্রমণে আতঙ্কিত বহু ছাত্র জামিয়ার ক্যাম্পাসও ছাড়তে শুরু করেছেন।