আচ্ছন্ন দিল্লি। ছবি: রয়টার্স।
দিওয়ালির পর এক সপ্তাহ কাটতে চললেও, দূষণের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেল না দিল্লি। শনিবার বিকালে হালকা বৃষ্টির পর বাতাসের গুণমান কিছুটা শোধরালেও, এখনও দমবন্ধ করা পরিস্থিতি অব্যাহত সেখানে। রবিবার সকালে রাজধানীর বাতাসের গুণমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৪০০-র উপরেই ঘোরাফেরা করছে, দূষণের পরিভাষায় যা ‘মারাত্মক’।
একিউআই ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকুল বলে ধরা হয়। দু’দিন আগেই রাজধানীর একিউআই তা ছাপিয়ে ৬০০ ছুঁয়েছিল। সেই তুলনায় খানিকটা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ দিন ভোর সাড়ে ৫টায় দিল্লির একিউআই ছিল ৪৪৭। আনন্দ বিহার এবং আলিপুরে একিউআই ছিল যথাক্রমে ৪৭৮ এবং ৪৬৩। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল আইটিও মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে একিউআই ছিল ৪৮৬।
এক দফা বৃষ্টি হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে আগেই আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছিল। তবে এখনই দূষণের কবল থেকে দিল্লিবাসীর অব্যাহতি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া সংক্রান্ত একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা জানিয়েছে, আগামী চার-পাঁচ দিনও দিল্লির আকাশ ঘোলাটেই থাকবে। ৭ ও ৮ নভেম্বর ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষজনকে বাড়িতে থাকারই পরামর্শ দিয়েছে ওই সংস্থা।
বৃষ্টির পরেও উন্নতি হয়নি পরিস্থিতির। ছবি: এপি।
আরও পড়ুন: দিল্লির আকাশ আরও ঘোলাটে, দূষণ নিয়ে রাজনীতির চাপান-উতোর চলছেই
দিওয়ালির পর থেকেই দিল্লির পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। তার জেরে গত ১ নভেম্বর সেখানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী এবং সংলগ্ন এলাকায় সমস্তরকম নির্মাণকার্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু রিয়েল এস্টেট সংস্থা নির্মাণকার্য চালিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ জমা পড়ে। তদন্তে নেমে নয়ডা এবং গ্রেটার নয়ডা এলাকা থেকে একটি রিয়েল এস্টেট সংস্থার ডিরেক্টর, তিন ইঞ্জিনিয়ার-সহ মোট ৩৯ জনকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: দূষণে মুখ ঢেকেছে দিল্লি, সবুজায়নে আট হাজার কোটি লগ্লির প্রতিশ্রুতি আঙ্গেলার
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেই দিল্লির দূষণ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে। দূষণের জন্য শুরু থেকেই পড়শি রাজ্য পঞ্জাব এবং হরিয়ানাকে দুষে এসেছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। সরকারি মদতে ওই দুই রাজ্যের কৃষকরা ফসলের গোড়া পুড়িয়ে যাচ্ছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। আর তাতেই দিল্লির আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। কিন্তু তাঁর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের জন্য দিল্লির মানুষ বিপদে পড়ুন, এমনটা কখনওই চাইবেন না পঞ্জাবের মানুষ। তাঁর নিজের সন্তান এবং নাতি-নাতনিরাও যে দিল্লিতেই থাকেন, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। যদিও গোটা ঘটনায় কেজরীবাল সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। তাদের দাবি, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনাভিত্তিক কাজ করে উঠতে পারেনি সরকার। তাই আজ এমন পরিস্থিতি।