ব্যারিকেড সরানোর কাজ শুরু করে দিল দিল্লি পুলিশ। শুক্রবার গাজ়িপুর সীমানায়। পিটিআই
সারি সারি কংক্রিটের ব্যারিকেড। হলুদ রঙের লোহার গার্ডরেল। রাস্তায় পোঁতা পেরেক। তার পরে কাঁটাতার।
গত প্রায় দশ মাস দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার সিঙ্ঘুর সঙ্গে দিল্লি-হরিয়ানা সীমানারই টিকরী ও দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানার গাজ়িপুর প্রায় নিয়ন্ত্রণ রেখার চেহারা নিয়েছিল। এত আয়োজনের লক্ষ্য ছিল একটাই। তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষকদের দিল্লিতে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করা। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি পুলিশ নিজে থেকেই সেই ব্যারিকেড সরানোর কাজ শুরু করে দিল। জাতীয় সড়ক থেকে একে একে ব্যারিকেড, কাঁটাতার সরানো শুরু করতে দিল্লি পুলিশের বিরাট বাহিনী রাস্তায় নামল।
আগামী ২৬ নভেম্বর দিল্লির সীমানায় কৃষদের ধর্নার এক বছর পূর্ণ হবে। এমন নয় যে, কৃষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে দিল্লির সীমানা থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তা সত্ত্বেও পুলিশের ব্যারিকেড সরানো দেখে কৃষক নেতারা মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশ-পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিজেপি নতুন কোনও ফন্দি আঁটছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইট করেছেন, ‘‘এখন তো শুধু দেখনদারির ব্যারিকেড সরেছে। শীঘ্রই কৃষি-বিরোধী তিনটি আইনও সরে যাবে। অন্নদাতা সত্যাগ্রহ জিন্দাবাদ!’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহকে সামনে রেখে কৃষক আন্দোলনে ইতি টানার চেষ্টা করছেন, সে বিষয়ে কৃষক নেতারা অবহিত। কৃষক আন্দোলন মেটানো হলে অমরেন্দ্র বিজেপির সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁতে যাবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। কিসান মোর্চার এক নেতা বলেন, ‘‘অমরেন্দ্র বা অমিত শাহের সঙ্গে আমাদের কোনও স্তরেই কোনও কথা হয়নি।’’
সুপ্রিম কোর্ট বার বার রাস্তা অবরোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ দিকে কৃষকরা বলে এসেছেন, তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেননি। পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড করেছে। কৃষকরা দিল্লিতে গিয়ে তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন। বাধা পেয়ে তাঁরা রাস্তার এক পাশে বসে পড়েছেন। কৃষক সংগঠনগুলির মঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চার বক্তব্য, পুলিশ এখন নিজে ব্যারিকেড সরিয়ে, পুরো দায় কৃষকদের উপরে ঠেলে আদালতকে খুশি করতে চাইছে।
শুক্রবার দিল্লি পুলিশ টিকরী-গাজ়িপুরে ব্যারিকেড সরানো শুরু করলেও সিঙ্ঘুতে ব্যারিকেড সরায়নি। গত নভেম্বরে দিল্লির সীমানায় কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা আটকানো হয়। ২৬ জানুয়ারিতে লাল কেল্লায় আন্দোলনকারীদের একাংশের তাণ্ডবের পরে সীমানায় নিরাপত্তা বাড়ে। কেন ব্যারিকেড সরানো হচ্ছে, তা নিয়ে দিল্লির পুলিশকর্তারা মুখ খুলতে চাননি। তাঁদের শুধু বক্তব্য, ‘উপর থেকে’ তেমনই নির্দেশ। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার দেবেন্দ্র পাঠকের বক্তব্য, ‘‘আমরা জাতীয় সড়কের জরুরি লেনগুলো খুলে দিতে চাইছি। আশা করছি, কৃষক সংগঠনগুলিও সাড়া দেবে।’’ উল্টো দিকে সংযুক্ত কিসান মোর্চার বক্তব্য, তাদের সঙ্গে পুলিশ বা কেন্দ্রীয় সরকারের এ বিষয়ে কোনও কথা হয়নি।
পুলিশ দিল্লিতে ঢোকার রাস্তা পুরোই খুলে দিলে আন্দোলনকারীরা কী করবেন, তা নিয়ে অবশ্য মোর্চা কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কৃষকেরা নিজেদের ফসল যেখানে খুশি বেচতে পারেন। রাস্তা খুলে দিলে আমরা সংসদে গিয়ে ফসল বেচব। আগে আমাদের ট্রাক্টর দিল্লি যাবে। আমরা এখনও কর্মসূচি ঠিক করিনি।’’ কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘আগামিকাল থেকে এ বিষয়ে মোর্চার বৈঠক শুরু হবে। আমরা তো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। পুলিশ বাধা দেওয়ায় সংঘাতে না গিয়ে কৃষকরা গত ১১ মাস রাস্তায় বসে রয়েছেন। রাস্তা আমরা আটকাইনি।’’