আগ্নেয়াস্ত্রের বেআইনি কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে দিল্লিতে গ্রেফতার ১৮ জন। — প্রতীকী চিত্র।
কয়েক দিন আগেই কলকাতায় ‘অস্ত্রভান্ডার’-এর সন্ধান পেয়েছিল পুলিশ। স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অভিযানে শিয়ালদহের কাছেই উদ্ধার হয়েছিল পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র, ৯০ রাউন্ড গুলি। গ্রেফতার করা হয়েছিল এক জনকে। এ বার দিল্লিতে আরও বড় পরিসরের আগ্নেয়াস্ত্রের ভান্ডারের খোঁজ মিলল। আগ্নেয়াস্ত্রের বেআইনি কেনাবেচায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৮ জনকে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা। ধৃতদের মধ্যে কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেউ ক্ষৌরকর্মী, কেউ আবার অন্য পেশায় যুক্ত। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনালেই বদলে যায় তাঁদের পেশা। দিল্লি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার (অপরাধ)-এর নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর একাধিক প্রান্তে অভিযান চালিয়েছিল। ওই অভিযানে বাজেয়াপ্ত হয়েছে চারটি সেমি অটোমেটিক পিস্তল, আটটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি রাইফেল, ৩৩ রাউন্ড গুলি এবং একটি চোরাই গাড়ি।
পুলিশি অভিযানে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই কম বয়সি তরুণ। স্বল্প সময়ে বেশি টাকা উপার্জনের জন্যই তাঁরা এই অপরাধ চক্রে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে সন্দেহ পুলিশের। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে অর্জুন নামে বছর পঁচিশের এক তরুণ। দিল্লির এক বিলাসবহুল হোটেলে সাফাইকর্মী। কিন্তু এই পরিচয়ের আড়ালেই অস্ত্রের বেআইনি কারবার চালাতেন তিনি। তাঁর সহকর্মী বা নিয়োগকর্তারা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি অর্জুনের এই দ্বিতীয় ‘রূপ’-এর বিষয়ে। বছর তেইশের অজয় পেশায় ক্ষৌরকর্মী। দিল্লির এক সালোঁয় কাজ করতেন। তাঁরও একটি গোপন জীবন ছিল। সালোঁয় কাজের আড়ালে তিনিও জড়িয়ে ছিলেন বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহের শৃঙ্খলে।
শুধু অর্জুন বা অজয়ই নয়, ধৃতদের বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই এই ধরনের চিত্র উঠে এসেছে। দিনের বেলা এক ধরনের পেশা। সন্ধ্যা ঘনালেই অন্য পেশা। দিনের বেলা তাঁদের কেউ চিত্রকর, কেউ সেলস্ম্যান, কেউ নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন, কেউ কৃষক, তো কেউ আবার দিনমজুর। কিন্তু রাতে তাঁরা সকলেই যেন হয়ে ওঠেন ‘পেশাদার অপরাধী’! এমনকি ধৃতদের মধ্যে স্নাতক স্তরের এক পড়ুয়াও রয়েছেন।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার দেবেশ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ধৃতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। কারও বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ, কারও বিরুদ্ধে ডাকাতি, তোলাবাজির অভিযোগ। এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে অতীতেও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হয়েছিল।
পুলিশের এই অভিযানের শুরু হয়েছিল ডাকাতির চেষ্টা আটকাতে একটি অভিযান থেকে। পুলিশের কাছে খবর ছিল, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দু’জন নয়ডায় ডাকাতির ছক কষছে। সেই মতো পূর্ব দিল্লির গাজ়িপুরে হানা দেয় পুলিশ। একটি গাড়ি থেকে পাকড়াও করা হয়ে সন্দেহভাজন দুই ডাকাতকে। তাদের থেকে পাওয়া যায় আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ, ছুরি। যে গাড়িটি তাঁরা ব্যবহার করেছিলেন, সেটিও চুরি করা। দু’জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলে আগ্নেয়াস্ত্রের বেআইনি কারবারের এই শৃঙ্খলের বিষয়ে। এর পরেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতেরা কোনও নির্দিষ্ট একটি গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করছে একাধিক দুষ্কৃতী চক্রের মাথা। তালিকায় রয়েছে মদন গ্যাং-ও। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসার জন্য মদন গ্যাংয়ের বদনাম রয়েছে দিল্লিতে। গাজ়িয়াবাদের বাসিন্দা বছর তেত্রিশের মদনই এই অস্ত্র কারবারের শৃঙ্খলের অন্যতম মূল চক্রী বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
দিল্লি পুলিশের এই অভিযানের গোপন নাম ছিল ‘অপারেশন ঈগল’। সাম্প্রতিক কালে অস্ত্রের বেআইনি কারবারের বিরুদ্ধে এটি অন্যতম বড় সাফল্য হিসাবেই দেখছে পুলিশ। এই অভিযানের ফলে রাজধানী ও সংলগ্ন অঞ্চলে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের সরবরাহ শৃঙ্খল ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন দিল্লির পুলিশকর্তারা।