সিঙ্ঘু সীমানায় তরোয়াল নিয়ে পুলিশের উপর হামলা। ছবি: রয়টার্স
বৃহস্পতিবার রাতে গাজিপুর সীমানা, শুক্রবার দুপুরে সিঙ্ঘু। উত্তেজনা ক্রমে চড়ছে কৃষক আন্দোলনের। প্রতিবাদীদের অভিযোগ, শুক্রবার দুপুরে কৃষকদের আন্দোলনস্থল থেকে তুলে দেওয়ার দাবিতে সিঙ্ঘু সীমানায় ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছেন ২০০-রও বেশি মানুষ। প্রাথমিকভাবে পোস্টার, ব্যানার নিয়ে হাজির হলেও পরে পাথর ছোড়া হয় ও একাধিক তাঁবু ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। অন্যদিকে, হাতাহাতির সময় তরোয়ালের ঘায়ে আহত হয়েছেন পুলিশকর্মীও।
চারদিকে পুলিশের কড়া পাহাড়া, গাড়ি যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা, এমনকি জলের গাড়ি দাঁড় করাতেও ঝামেলা করছিল পুলিশ। তার মধ্যে এত লোক কী করে আন্দোলনস্থলে ঢুকে পড়ল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সাদা পোশাকে পুলিশকর্মীরাই আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করতে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ করেছে, এই সময়ে দু’দিক থেকেই পাথর ছোড়া শুরু হয়েছিল। সেই কারণেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। শান্তি বজায় রাখতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়, ফাটাতে হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল।
সকালে গাজিপুরের আন্দোলনস্থলে গিয়েছিলেন দিল্লির উপমু্খ্যমন্ত্রী মণীশ সিশোদিয়া। তিনি বলেন, কৃষকদের জল ও অস্থায়ী শৌচালয়ের ব্যবস্থায় কোনও রকম অসুবিধা যেন না হয়। পরে টিকরি সীমানায় আসেন আপ নেতা রাঘব চাড্ডা। তিনিও আন্দোলনস্থলে উপস্থিত থেকে বলেন, ‘‘মোদী সরকার অন্নদাতাদের সঙ্গে অন্যায় করছে।’’
শুধু সিঙ্ঘু সীমানা নয়, টিকরি সীমানাতেও কৃষক আন্দোলন বিরোধীদের জটলা দেখা যায়। খবর, তাঁরা স্থানীয় মানুষ। ‘জাতীয় পতাকার অপমান করা হয়েছে’, এই পোস্টার হাতে তাঁরা আন্দোলনস্থলে আসেন। তাঁদের দাবি, ‘যাঁরা লালকেল্লায় খালিস্তানি পতাকা উড়িয়েছে, তাঁদের এই আন্দোলনস্থল থেকে সরিয়ে দিতে হবে’। যদিও টিকরি সীমানায় মুখোমুখি দু’পক্ষের উপস্থিতির পর বড় কোনও ঝামেলা হয়নি।
অন্য দিকে, কৃষকদের সমর্থনে নতুন করে আন্দোলনে নামতে চলেছেন অণ্ণা হজারে। তিনি বলেছেন, ‘‘৩০ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশনে বসতে চলেছি।’’ মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে নিজের এলাকাতেই তিনি বসবেন অনশনে। কৃষকদের সমর্থনে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের দাবিগুলির দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে না। সরকার যথেষ্ট সংবেদনশীল নয়।’’ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন। কিন্তু তাও সরকার আলোচনা করে বিষয়টির কোনও সমাধানে পৌঁছতে পারেনি বলে তিনি ‘জীবনের শেষ’ অনশনে বসতে চলেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে উত্তেজক পরিস্থিতির মধ্যে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত ঘোষণা করেছিলেন, শুক্রবার মুজফ্ফরনগরে কিসান মহাপঞ্চায়েত ডাকা হবে। সেই মতো দুপুর তিনটে নাগাদ শুরু হয়ে হয় মহাপঞ্চায়েত। আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরী যোগ দিয়েছেন সেই আলোচনায়। আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা এই আলোচনা থেকে ঠিক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।