জয়ের পরে ‘ধন্যবাদ যাত্রা’য় আপ নেতা মণীশ সিসৌদিয়া। বুধবার। ছবি: পিটিআই
লড়াই যে এতটা হাড্ডাহাড্ডি হবে কে জানত!
দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী তিনি। সঙ্গে শিক্ষা ও বিদ্যুৎমন্ত্রীও। দিল্লিবাসীকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল সংস্কার ঘটানোর পিছনে যাঁর হাত, তিনি মণীশ সিসৌদিয়া। তাই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজেপির অখ্যাত রবীন্দ্র নেগির বিরুদ্ধে সিসৌদিয়ার জয় কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলেই ধরে নিয়েছিল আপ। কিন্তু উদ্বেগ বাড়িয়ে সেই লড়াই চলে দ্বাদশ রাউন্ড পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩২০৭ ভোটে হারেন নেগি।
সেই জয়ের খবর পেয়ে গণনাকেন্দ্র থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বসে হাঁফ ছেড়েছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। দলীয় দফতরে নিজেকে বন্দি করে রাখা কেজরীবাল তার পরে উপস্থিত জনতার সঙ্গে দেখার করতে বাইরে বেরোন। আপ সূত্রের মতে, এক দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর ‘ডান হাত’ সিসৌদিয়ার জয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দফতরের ভিতরে বসে থাকার পণ করেছিলেন কেজরীবাল।
আরও পড়ুন: তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রবিবার শপথ নেবেন কেজরী
মুখ্যমন্ত্রী হয়েও গত পাঁচ বছরে নিজের হাতে কোনও দফতর রাখেননি কেজরীবাল । অর্থ, শিক্ষা, বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন সিসৌদিয়ার হাতে। কেজরীবালের ভরসার মর্যাদা রাখেন সিসৌদিয়া। সোমনাথ ভারতী, গোপাল রাই, সত্যেন্দ্র জৈনের মতো মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়মের বিরুদ্ধে বরাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সিসৌদিয়ার দিকে আঙুল তোলার সুযোগ পাননি বিরোধীরা।
কেজরীবাল তখন সামাজিক আন্দোলন কর্মী। তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় সিসৌদিয়ার। সে সময়ে সাংবাদিকতা ছেড়ে তিনিও জড়িয়ে পড়েছিলেন সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে। ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে প্রায় সমবয়স্ক দু’জনের। পরবর্তীতে কেজরীবাল আম আদমি পার্টি গড়লে সিসৌদিয়া জন্মলগ্ন থেকেই তার সদস্য। আপ গঠনের সময় থেকেই জড়িত এক নেতার কথায়, ‘‘কেজরীবাল, কুমার বিশ্বাস, প্রশান্ত ভূষণ, যোগেন্দ্র যাদব, সিসৌদিয়ারা এক সঙ্গে পথ চলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু নীতিগত প্রশ্নে অন্যদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে কেজরীবালের। অনেকেই দল ছাড়েন। পুরনো সতীর্থরা একে একে চলে গিয়েছেন, আর সিসৌদিয়া কাছাকাছি এসেছেন কেজরীবালের। তাঁর উপর মুখ্যমন্ত্রীর নির্ভরতা বেড়ে গিয়েছে।’’
আপ শিবির বলছে, কেজরীবালের বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছেন সিসৌদিয়া। দ্বিমত হলে ঘনিষ্ঠ মহলেও কোনও দিন ক্ষোভ উগরে দেননি। বরং কেজরীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে বিতর্ক মিটিয়ে নিয়েছেন। কেজরীবাল সরকারের মুখ হলেও, কার্যত দলের মাথা সিসৌদিয়া। পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটের সময়ে আপ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, দল ক্ষমতায় এলে কেজরীবাল হবেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। সিসৌদিয়া মুখ্যমন্ত্রী হবেন দিল্লির। আপের এক নেতার কথায়, ‘‘দলের তিনি যে কতটা অপরিহার্য, তা ভাল করেই জানেন সিসৌদিয়া। কিন্তু শুরুর দিন থেকেই যেমন বিনয়ী ছিলেন, এখনও সে রকমই আছেন তিনি।’’
আপ সূত্রের খবর, এ বারও উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে সিসৌদিয়াকে। এ নিয়ে কী ভাবছেন, তা নিয়ে কেজরীবালকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিককে কেজরী বলেন, ‘‘সময় এলেই জানতে পারবেন।’’