কেক ওয়াক: আবার আপ। দিল্লি জয়ের পরে দলীয় দফতরেই স্ত্রীর জন্মদিন পালন কেজরীবালের। ছবি: পিটিআই
‘আই লাভ ইউ’ বলেই ‘ফ্লাইং কিস’। অরবিন্দ কেজরীবালের মুখ থেকে কেবল ওই ক’টি শব্দ শোনার অপেক্ষা। মুহূর্তে উদ্বেল উপস্থিত জনতা। বড়-ছোট, নারী-পুরুষ, গরিব-বড়লোক, সব মিশে গিয়ে তখন একটাই প্রবল চিৎকার, ‘‘কেজরীবাল.. কেজরীবাল...!’’ প্রতীক্ষা চলছিল সেই সকাল থেকেই। কখন সামনে আসবেন আম আদমির নায়ক! যাঁর কৌশলে ফের মাৎ হলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। তাই কেজরীবাল মুখ খুলতেই প্রবল উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে জনতা।
নিজের জয় নিশ্চিত বুঝেই সকাল এগারোটায় দলীয় দফতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। সকাল থেকেই সঙ্গে উপস্থিত সঞ্জয় সিংহের মতো বেশ কিছু নেতা। আপ যে জিতছে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সকালেই। কিন্তু দলে তাঁর ঘনিষ্ঠ তথা দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার একের পর এক রাউন্ডে পিছিয়ে পড়া দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান কেজরীবাল। পিছিয়ে ছিলেন অতীশী, দিলীপ পাণ্ডের মতো ঘনিষ্ঠেরা। সব মিলিয়ে প্রথম পর্বে বেশ উদ্বেগেই কাটান কেজরীবাল। বেলা বারোটার মধ্যে অন্যদের জয় নিশ্চিত হলেও, তখনও পিছিয়ে সিসৌদিয়া। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলেন না কেজরীবাল। আপ সূত্রের মতে, সে কারণে যত ক্ষণ না মণীশের জেতার বিষয়ে ইতিবাচক খবর না পাচ্ছেন তত ক্ষণ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা না বলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সকাল থেকেই সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সুনীতা, মেয়ে হর্ষিতা ও ছেলে পুলকিত। আজ আবার কেজরীবালের স্ত্রীর জন্মদিন। শেষে মণীশের এগিয়ে যাওয়ার খবর আসতেই, দলীয় দফতরে কেক কাটেন সুনীতা ও অরবিন্দ। বাইরে তখন জনতা ব্যস্ত ভাঙড়া নাচে। চেনা-অচেনা যে যাকে পাচ্ছেন জড়িয়ে ধরছেন। মাখিয়ে দিচ্ছেন আবির। দফায় দফায় চলছে লাড্ডু বিতরণ। মাঝখানে এক বার জনতার মাঝে এসেছিলেন আপ বিধায়ক রাঘব চড্ডা। মুহূর্তের মধ্যে তাঁকে ঘিরে ধরে ভিড়। কোনও ভাবে তাঁকে দফতরের ভিতরে ঢুকিয়ে দেন অন্য কর্মীরা।
বেলা সাড়ে তিনটে। তত ক্ষণে খবর এসে গিয়েছে যে দ্বাদশ রাউন্ড গণনার শেষে এগিয়ে গিয়েছেন মণীশ। উপস্থিত জনতাকে আর অপেক্ষা না করিয়ে সোজা দফতরের ছাদে তৈরি হওয়া অস্থায়ী মঞ্চে গোটা পরিবার ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে উঠে আসেন কেজরীবাল। বিজেপির প্রবল মেরুকরণের রাজনীতিকে নস্যাৎ করে যে ভাবে মানুষ তাঁর পিছনে দাঁড়িয়েছেন সে জন্য দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ দেন তিনি। বলেন, ‘‘দিল্লির মানুষ বিস্ময়কর কাজ করেছেন। আমি আপনাদের ভালবাসি।’’ এর পরেই কেজরীবাল বলেন, ‘‘এ দিনের জয় এক নতুন রাজনীতির জন্ম দিল। তা হল কাজের রাজনীতি। যে কাজ করবে সে জিতবে। এই রাজনীতিই একবিংশ শতাব্দীতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’
আজ মঙ্গলবার। বজরংবলীর পুজোর দিন। কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতা শেষে কনট প্লেসের হনুমান মন্দিরের উদ্দেশে রওনা হন কেজরীবাল। পুজোও দেন সেখানে। এ বারের নির্বাচনী প্রচারের একেবারে শেষ পর্বে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই বজরংবলীও হয়ে উঠেছিলেন বিজেপি-আপ দু’পক্ষেরই প্রচারের হাতিয়ার। মেরুকরণের সূত্র মেনে শাহিন বাগের সমর্থনকারী কেজরীবাল ও তাঁর দলকে হিন্দু- বিরোধী বলে প্রচারে নেমেছিলেন দিল্লির বিজেপি সাংসদ প্রবেশ বর্মা। তিনি যে পুজো-পাঠ করেন তা প্রমাণে প্রচারের মঞ্চ থেকে হনুমান চালিশা পাঠ করে শুনিয়ে দিয়েছিলেন কেজরীবাল। তাতেও অবশ্য বিবাদ থামেনি। ভোটের আগের দিন তাঁর কনট প্লেসের বজরংবলীর মন্দিরে যাওয়ায় মন্দির অশুদ্ধ হওয়ার অভিযোগ তোলেন দিল্লির বিজেপি সভাপতি মনোজ তিওয়ারি। তাঁর দাবি ছিল, ভণ্ড কেজরীবালকে উচিত শিক্ষা দেবেন বজরংবলী। তা নিয়ে আজ কটাক্ষ করতে ছাড়েননি আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ। বলেন, ‘‘বজরংবলী কার সঙ্গে রয়েছেন তা আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: মেরুকরণের ধার কি কমছে? আপ-ঝড়ে অমিত কোথায়
দীন দয়াল উপ্যাধ্যায় মার্গের আপের সদর দফতর থেকে কিলোমিটার খানেক এগিয়ে গেলেই বিজেপির সদর দফতর। বেলা বাড়তেই সেখানে হাল্কা হয়ে যায় ভিড়।