জয়ের পর অরবিন্দ কোজরীবাল। ছবি: রয়টার্স।
দিল্লির সদ্য সমাপ্ত ভোটে যে জাতপাতের সমীকরণ কাজ করেনি, তা মেনে নিয়েছেন রাজনীতিকেরা। কিন্তু ফলাফল পরবর্তী বিশ্লেষণে উঠে আসছে একটি সামাজিক ‘ফ্যাক্টর’-এর কথা। তা হল, বামাশক্তি।
দিল্লির মহিলারা উপুড়হস্তে ভোট দিয়েছেন আম আদমি পার্টিকে। বিজেপি বা কংগ্রেস সমর্থকদের প্রাপ্ত প্রমীলা ভোটের থেকে যা অনেকটাই বেশি। এমনকি আপ-এর প্রাপ্ত ভোটের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে নারী এবং পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান সমান। কেজরীবালের দল যত মহিলা ভোট পেয়েছেন, তার থেকে পুরুষ ভোট মাত্র ০.০৭ শতাংশ বেশি। এমনটা এর আগের দিল্লি বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে ঘটেনি বলেই জানা যাচ্ছে। ভারতীয় মহিলারা তাঁর স্বামী বা পরিবারের পুরুষ কর্তার নির্দেশে ভোট দেন— সমাজতাত্ত্বিকদের মতে, এই ধারণার মূলে আঘাত করেছে এ বারের নির্বাচন। বিষয়টি এমনই যে নারীরা এ ভাবে কেজরীবালের পক্ষে ভোট না দিলে, তাঁর পক্ষে এত বিপুল ভাবে জয়ী হওয়া সম্ভব ছিল না। ভোট পরবর্তী বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আপ পেয়েছে মহিলা ভোটারদের ৬০ শতাংশ ভোট যা কি না ২০১৫ সালের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। তুলনায়
এই ক্ষেত্রে বিজেপি পেয়েছে ৩৫ শতাংশ ভোট।
জেএনইউয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষের কথায়, ‘‘বিজেপি যে ঘৃণার ভাষা ব্যবহার করেছে, হিংসার পথ নিয়েছে, কোনও মহিলার তা ভাল লাগার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হিংসার ঘটনার পরে বিশেষ করে অল্পবয়সী মহিলা ভোটারেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিজেপির থেকে। কংগ্রেসকে তাঁরা বাছেননি, কারণ ভোট নষ্ট হত।’’
গত পাঁচ বছরে মহিলাদের পাশে যে ভাবে দাঁড়িয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল, তার প্রতিফলন পড়েছে ভোটে। প্রথমত, গত বছর অক্টোবরে মহিলাদের বাসভাড়া মকুব করে দিয়েছে আপ সরকার। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে প্রায় ৫০ শতাংশ পরিবারের মহিলারা এই সুবিধা নিয়েছেন। আর এই সমস্ত পরিবারের মহিলাদের ভোট? বিজেপির তুলনায় আপ-এ তা গিয়েছে ৪২ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয়ত, পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য— শাহিন বাগ এবং সিএএ নিয়ে বিজেপির প্রচার এতটাই হিংসাত্মক ছিল যা মহিলা আবেগকে তাদের বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়েছে। প্রতিবাদকারীদের (যাদের অনেকেই মহিলা) ওপরে যে ভাবে পুলিশি হামলা হয়েছে, সেটিও বিতৃষ্ণার কারণ।
তৃতীয়ত, আপ সরকারের জল এবং বিদ্যুতের ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্তকে সব চেয়ে বেশি স্বাগত জানিয়েছেন গৃহকত্রীরা, যাঁদের সংসারের খরচ সামলাতে হয়। মোদী জমানায় বাজারে আগুন লাগার ঘটনায় বীতশ্রদ্ধ হয়েছিলেন তাঁরাই বেশি। এমনটাও দেখা গিয়েছে, একই পরিবারে
পুরুষরা পদ্মে ভোট দিলেও, মহিলারা দিয়েছেন ঝাড়ুতে।
কেজরী অবশ্য নতুন মন্ত্রিসভায় কোনও মহিলাকে জায়গা দেননি। তাঁর গত মন্ত্রিসভাতেও কোনও মহিলা সদস্য ছিলেন না।