ছবি পিটিআই।
আপাতত অপেক্ষা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, রবিবার দিল্লিতে হাওয়ার গতি বাড়বে। দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলের (জাতীয় রাজধানী অঞ্চল বা এনসিআর) উপরে যে ধোঁয়াশার চাদর দশ দিন ধরে জমে রয়েছে, সপ্তাহান্তের দমকা হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যাবে সেই চাদর। সূর্যের মুখ দেখবে এনসিআর। দূষণ কমবে দিল্লির। এই বায়ুপ্রবাহের আশায় ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এনসিআরে সমস্ত স্কুল-কলেজ, সরকারি অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দিল্লিতে আপাতত ঢুকতে পারবে না ট্রাক। এনসিআরে ১১টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৬টিই আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে।
প্রতি বারের মতো এ বছরেও শীত পড়তেই মাত্রাছাড়া দিল্লির দূষণ। দিল্লিতে আগেই বন্ধ ছিল, গত কাল এনসিআরের বাকি রাজ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যানবাহনে রাশ টানা হচ্ছে। জরুরি নয়, এমন নির্মাণ কাজও বন্ধ থাকছে।
এ সব সত্ত্বেও আজ দিল্লির বায়ু-মান ছিল ‘খুব খারাপ’। সোমবারের পরে আজ ফের সুপ্রিম কোর্টে দিল্লির বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। সেখানে ফসলের গোড়া পোড়ানোর ফলে কত শতাংশ দূষণ হয়, তা নিয়ে ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন দিল্লি ও কেন্দ্রের আইনজীবীরা। যা দেখে ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা বলেন, “টিভিতে এ সংক্রান্ত বিতর্ক আরও বেশি দূষণ ছড়াচ্ছে। ... আমরা এখানে একটি সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছি।” আমলাদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ গোপন করেননি রমণা। দূষণ কমানোর প্রশ্নে আমলাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমলাতন্ত্রের মধ্যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চান না। চান, আদালত সব করে দিক।” সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ফসলের গোড়া পোড়ানোর জন্য কোনও কৃষককে আদালত দোষী সাব্যস্ত করতে রাজি নয়। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, “ফসলের গোড়া পোড়ানো রোখার প্রশ্নে আবেদন জমা পড়লেও, কৃষকদের দিকটি ভাবতে হবে। যাঁরা দিল্লির পাঁচ-তারা, সাত-তারা হোটেলে থাকেন, তাঁরাই কৃষকদের এ ভাবে দায়ী করেন।’’
সোমবার এই মামলার শুনানিতে এনসিআরে যানবাহন কমাতে সরকারি-বেসরকারি দফতরে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু করার প্রস্তাব রেখেছিল দিল্লি সরকার। যুক্তি ছিল, দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় ওই নীতি চালু না হলে লাভ নেই। কিন্তু দিল্লি সরকারের ওই প্রস্তাবে কেন্দ্রের সায় নেই বলে আজ জানিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি আদালতকে জানান, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের ‘কার পুল’ করে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রশ্ন, করোনা-কালে তা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? দিল্লি সরকার আদালতে জানিয়েছে, দিল্লিতে গণপরিবহণের সুবিধা আরও বাড়াতে দ্রুত সিএনজি চালিত ১০০টি বাস রাস্তায় নামাতে চলেছে তারা। প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন কেন নামানো হয়নি? সোমবার বলা সত্ত্বেও মঙ্গলবারের বৈঠকে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি কেন ঐকমত্যে আসতে পারেনি, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।
কেন্দ্র শীর্ষ আদালতকে জানায়, আবহাওয়াবিদদের আশা, ২১ নভেম্বর বায়ুপ্রবাহ দূষণের চাদর সরিয়ে দেবে। তাই আপাতত পদক্ষেপ সে কথা মাথায় রেখে। কেন্দ্রের তরফে মেহতা পরের শুনানি ২৩ নভেম্বর রাখার আবেদন জানান। তা মেনে নেয় শীর্ষ আদালত।