'ছপাক' সিনেমায় দীপিকা পাড়ুকোন (বাঁ দিকে), জেএনইউ-এর আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে ক্যাম্পাসে দীপিকা। -ফাইল চিত্র
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ মুখোশধারীদের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে আচমকাই ক্যাম্পাসে পৌঁছে গিয়েছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। শুধু জানান, আন্দোলনে সমর্থনের জন্যই তিনি গিয়েছিলেন। কিন্তু তার জেরে দিনভর ট্রোলড হলেন বলিউড তারকা। ‘#বয়কট ছপাক’ দিনভর ট্রেন্ডিং রইল টুইটারে।
কিন্তু সেই আক্রমণ করতে গিয়ে একটি ‘ভুল’ খবরের পিছনে ছুটলেন নেটিজেনরা। তা যাচাই না করেই সেটাকে ধরে দীপিকাকে আক্রমণ করে গেলেন। বাদ গেলেন না বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরাও। এক আইনজীবী বিজেপি নেতা রীতিমতো আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে বসলেন টুইটারে। কিন্তু শেষমেষ দেখা গেল যার উপর ভিত্তি করে এই আক্রমণের ঝড়, সেই খবরটিই আসলে ভুল। আর গোটা পর্বে দিপীকার মন্তব্য, তিনি ‘ব্যথিত’। এটাই যেন স্বাভাবিক প্রবণতা না হয়ে ওঠে।
আক্রমণের বিষয়বস্তু কী?
দীপিকা পাডুকোনের অভিনীত ‘ছপাক’ ছবিতে অ্যাসিড আক্রান্তের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দীপিকা। ছবিটি মুক্তি পাবে ১০ জানুয়ারি। বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে মেঘনা গুলজারের পরিচালনায় নির্মীত হয়েছে এই ছবিটি। একটি পত্রিকায় সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এই ছবির উপর। তাতে লেখা হয়েছিল, দিল্লির ওই ঘটনায় বাস্তবে অ্যাসিড আক্রমণকারীর নাম ‘নঈম খান’। কিন্তু ‘ছপাক’ সিনেমায় সেই নাম পাল্টে করা হয়েছে রাজেশ।
আর এতেই আক্রমণের ‘রসদ’ পেয়ে যান নেটিজেনরা। যেখানে বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি সিনেমা, সেখানে রিয়েল লাইফের ‘নঈম খান’ (মুসলিম যুবক) কী ভাবে সিনেমায় রাজেশ (হিন্দু) হয়ে গেলেন তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলে দীপিকাকে ব্যাপক আক্রমণ শুরু হয়। এমনকি, এতে হিন্দু সম্প্রদায়কে অপমান করার চেষ্টা হয়েছে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন টুইটারে।
অন্য দিকে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর টুইট, “সিনেমায় সত্যি যদি এ ভাবে মুসলিম নামকে হিন্দু করে দেওয়া হয়, তাহলে আইনি নোটিস পাঠানো হবে। এটা মানহানি।” বিজেপি নেতা বাবুল সুপ্রিয় টুইটারে লেখেন, “সিনেমাটা আমি দেখিনি। তবে ছবিটি দেখব। শিল্পের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা অপ্রয়োজনীয় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।...”
বাবুল সুপ্রিয় ও সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর টুইটের স্ক্রিন শট।
আসল ঘটনা কী?
২০০৫ সালে দিল্লির খান মার্কেট এলাকায় একটি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় লক্ষ্মী আগরওয়ালের (সেই সময় নাবালিকা ছিলেন) উপর অ্যাসিড ছুড়ে মারে নঈম খান সহ তিন যুবক। মূল অভিযুক্ত ছিল নঈম। তার পর লক্ষ্মী আগরওয়ালের জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও লড়াইকে তুলে ধরা হয়েছে ‘ছপাক’ সিনেমায়। সিনেমার প্রযোজকও দীপিকা পাড়ুকোনই।
সিনেমায় নাম পরিবর্তন করা হয়েছে লক্ষ্মী এবং নঈম দু’জনেরই। লক্ষ্মীর নাম সিনেমায় মালতি। মূল অভিযুক্ত নঈমের নাম পরিবর্তন হলেও ধর্ম পরিবর্তন করা হয়নি বলে দাবি একাধিক ফিল্ম রিভিউয়ারের। সিনেমা রিলিজের আগে ফিল্ম সমালোচক ও রিভিউয়ারদের দেখানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেমনই এক রিভিউয়ার (যিনি ‘ছপাক’ দেখেছেন) একটি জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে দাবি করেছেন, সিনেমায় নঈমের নাম ‘বশির খান’ ওরফে ‘বাবু’। পাশাপাশি অন্য একটি সংবাদ মাধ্যমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অভিনন্দন সেখরিও জানিয়েছেন, “আক্রমণকারীর (নঈম খান) ধর্ম পরিবর্তন করা হয়নি।”
এই ধরনের প্রচুর টুইট করা হয়েছে।
অর্থাত্ সারা দিন যা নিয়ে দীপিকাকে আক্রমণ করা হল, আসলে তার ভিত্তিই নেই। ভুলের উপর দাঁড়িয়ে সারা দিন চলল আক্রমণ। তবে গোটা পর্বে দীপিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও মন্তব্য করেননি। একটি হিন্দি চ্যানেলে সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, “আমি যেটা বলতে চাই, সেটা দু’বছর আগে পদ্মাবত রিলিজের সময়েই বলেছিলাম। এখন যা দেখছি, তা আমাকে ব্যথিত করে। আশা করি এটা যেন নতুন স্বাভাবিক প্রবণতা না হয়ে ওঠে। আমি ভয় পাচ্ছি, আমি দুঃখিত। এটা আমার দেশের ভিত্তি নয়।”