Tripura Assembly Election 2023

গণতন্ত্র-বিতর্কে ভোটে আড়ালেই থাকল উন্নয়ন

ভোটের ফলাফল শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, ত্রিপুরার এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে উন্নয়নের আলোচনাকে ছাপিয়ে গিয়েছে গণতন্ত্রের প্রশ্নে বির্তক।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

আগরতলা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩৪
Share:

মানিক সাহা এবং মানিক সরকার। নিজস্ব চিত্র।

ভোর থেকে রাত পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। জনতার রায় কী হবে, জানা যাবে আগামী ২ মার্চ ভোট-যন্ত্র খোলা হলে। জনতার ভোট দেওয়ার মেজাজ শাসক ও বিরোধী, দু’পক্ষকেই ভাবনায় রেখেছে।

Advertisement

ভোটের ফলাফল শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, ত্রিপুরার এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে উন্নয়নের আলোচনাকে ছাপিয়ে গিয়েছে গণতন্ত্রের প্রশ্নে বির্তক। শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে লোকসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা বা উপনির্বাচন— কোনও ভোটই তারা সুষ্ঠু ভাবে হতে দেয়নি। গণতন্ত্রকে রক্ষা করার ডাক দিয়েই আসন সমঝোতায় গিয়েছে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস। আবার সেই জোট হওয়া মাত্রই বিজেপি পাল্টা বলে গিয়েছে, বাম আমলে কেমন ‘সায়েন্টিফিক রিগিং’ হত, কংগ্রেস কী ভাবে তাদের জমানায় ‘সন্ত্রস্ত’ করে রাখত গোটা রাজ্যকে! এই তীব্র বিতর্কে হারিয়েই গিয়েছে উন্নয়নের চর্চা!

বাংলায় যে কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে তীব্র বিতর্ক, সরকারি তথ্য বলছে, উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ওই প্রকল্পেই ঘর পেয়েছে তিন লক্ষ পরিবার। ত্রিপুরায় প্রত্যন্ত গ্রাম বলতে তেমন কিছু আর নেই, প্রায় সর্বত্রই সড়ক যোগাযোগ তৈরি। বিজেপির দাবি, ক্ষমতায় এসে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সহযোগিতায় তারাই রাজ্যে উন্নয়ন এনেছে। আবার বাম শিবিরের পাল্টা দাবি, তাদের আমলে শুরু হওয়া নানা প্রকল্পকে এখন নিজেদের ‘কৃতিত্ব’ বলে দাবি করছে বিজেপি! তবে ভোটের প্রচারে এ সবের উপরে ছিল গণতন্ত্র আছে না নেই, সেই সংক্রান্ত বিতর্কই।

Advertisement

বুথে বুথে ভোটারের লাইন। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী

বিরোধী দলনেতা এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকারের মতে, ‘‘আলোচনার অভিমুখ এই দিকে ঘুরে গিয়েছে বিজেপির কাজকর্মের জন্যই। আমরা তো বলেছি, সরকারে এসে বিজেপি কী করেছে, সেটাই বলুক। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ সবাই এসে বামফ্রন্ট কী করেছিল, তা-ই নিয়ে অসত্য ভাষণ করে গেলেন! এতেই বোঝা যায়, বিজেপির আসলে বলার মতো কিছু ছিল না।’’

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার অবশ্য দাবি, ‘‘উন্নয়নের জন্য যে শান্তি এবং পরিবেশ লাগে, পরিবর্তনের পরে সেটা আমরাই এনেছি। এই যে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভাবে বিধানসভার নির্বাচন হল, তা তো পরিবর্তন এবং উন্নয়নের ফলেই। বাম আমলে শান্তিপূর্ণ ভোটের নামে ‘সায়েন্টিফিক রিগিং’ হতো!’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তীর আরও দাবি, ‘‘জনজাতি সমাজপতিদের জন্য আর্থিক সহায়তা দু’হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা-সহ উন্নয়নের নির্দিষ্ট কিছু আশ্বাস আমরা কিন্তু ইস্তাহারে দিয়েছি।’’

অল্প আসনে লড়লেও তৃণমূল অবশ্য এখানে উন্নয়নের ' বাংলা মডেলে'র কথা বলেছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ত্রিপুরার বিজেপি সরকার সব ব্যাপারে দিল্লির উপরে নির্ভরশীল কিন্তু বাংলায় তৃণমূলের সরকার নিজেদের জোরে উন্নয়ন করে দেখিয়েছে। দলের নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, " বিজেপি বাংলার তৃণমূলের অনেক প্রকল্প নকল করছে এখানে। মানুষ নকল কেন নেবেন, আসলটাই নিন!"

ভোট মোটের উপরে নির্বিঘ্নে মিটলেও ভোটের পরে রাজ্যের নানা জায়গা থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। নিবার্চনের জন্য আসা ৪০০ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনীর ৩০০ কোম্পানি ফিরে যেতে শুরু করেছে, ফলপ্রকাশ পর্যন্ত থাকার কথা ১০০ কোম্পানির। ভোটের দিনে শাসক বাহিনীর ‘হামলা’য় আক্রান্ত সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের দেখতে শুক্রবার আগরতলার দু’টি হাসপাতালে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা মানিকবাবু। ফল প্রকাশের আগে বাম কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা রাখার দিকেই আপাতত নজর সিপিএম নেতৃত্বের। দু’টি কেন্দ্রের ২৪টি বুথে শাসক বিজেপি পুনর্নির্বাচন চাইলেও বিরোধী বামেদের তরফে তেমন কোনও দাবি এখনও ওঠেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement