বাবার তত্ত্বাবধানে ছেলের প্রশিক্ষণ। নিজস্ব চিত্র
শিলংয়ে কাজ করতে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় মস্তানদের হাত থেকে বাঁচতে, নিতান্তই আত্মরক্ষার জন্যে মার্শাল আর্ট শিখেছিলেন ত্রিপুরার বিজেন সিনহা। পরে ফিরে আসে নিজের রাজ্যে। কিন্তু সেই ‘মার্শাল আর্ট’ এখন তাঁকে দিনরাত তাড়া করে ফেরে। দিনমজুরের কাজ করেও প্রত্যেক দিন ছেলেকে মার্শাল আর্টে তালিম দিয়ে যাচ্ছেন বিজেন। ছেলে তাঁর ইতিমধ্যেই রাজ্য ও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন প্রতিষোগিতায় ১৭টি পদক পেয়েছে। কিন্তু বিজেন স্বপ্ন দেখেন, আরও বড় প্রতিযোগিতায় আরও বড় সাফল্য আনবে তাঁর ছেলে। সে ক্ষেত্রে বড় বাধা বিজেনের দারিদ্র।
ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার প্রত্যন্ত জামথুং গ্রামে থাকেন বিজেন ও তাঁর পরিবার। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। তাঁর কথায়, ১৯৯১ সালে রোজগারের সন্ধানেই মেঘালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে খাসিয়া যুবকর প্রায়ই মারধর করত বহিরাগতদের। দর্জির কাজের পাশাপাশি আত্মরক্ষার জন্যে মার্শাল আর্ট শেখেন তিনি। পরে ভালবেসেই মন দিয়ে শেখেন নানা কসরৎ। তাঁর দাবি, ‘‘ব্ল্যাক বেল্টও পেয়েছিলাম।’’ তিনি নিজে মেঘালয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশও নেন। শিলংয়ের বরপাথরে ভূতনাথ ক্লাবে কিছুদিন প্রশিক্ষকের কাজও করেন।
কিন্তু বাবার জোরাজুরিতে ২০০৫ সালে বিজেন ফিরে আসেন ত্রিপুরায়। নিজের গ্রামে ফিরে দিনমজুরের কাজ নেন তিনি। কিন্তু মার্শাল আর্ট তাঁর মাথায় রয়ে গিয়েছে। তিনি জানান, গ্রামের ছেলেদের শেখাতে চেয়েছিলেন। কেউ রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ছেলে কৃপেশকেই বেছে নেন তিনি। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কৃপেশ পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার কাছে মার্শাল আর্টের তালিম নিচ্ছে। ছেলে ভালই শিখছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে ধরনের খাবার ছেলের মুখে জোগাতে হয় সেই অর্থ নেই বলে বাবার দুঃখ।
এই আর্থিক অনটনের মধ্যে চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখছেন না বাবা। ভবিষ্যতে ছেলে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের হয়ে নাম করবে, এই স্বপ্ন দেখেন তিনি। ছেলের প্রশিক্ষণ ও কসরতের ভিডিয়ো করার জন্য একটি পুরনো মোবাইল কিনছেন বিজেনবাবু। এই ভিডিয়ো দেখে কোনও সংস্থা যদি সাহায্যের হাত বাড়ান! আপাতত এই আশায় রয়েছেন তিনি।