দত্তাত্রেয় হোসাবলে। ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লি, ১০ অগস্ট: সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত যখন সংরক্ষণ নীতি পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলছেন, তখন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে আজ সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষে সওয়াল করে সরব হলেন।
আজ দলিত সমাজ নিয়ে লেখা একটি বইয়ের উদ্বোধনে হোসাবলে বলেন, ‘‘আমি ও আমার সংগঠন আজ থেকে নয়, কয়েক দশক ধরে সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল করে এসেছি। বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজন রয়েছে।’’ সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের পরেই সঙ্ঘের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ পদে রয়েছেন হোসাবলে। সংরক্ষণ প্রশ্নে তাঁর ওই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনীতির অনেকে মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সংরক্ষণ নীতিতে পরিবর্তন আনার যে ইঙ্গিত বিজেপি শিবির দিয়েছে, তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে সঙ্ঘের শীর্ষ পদাধিকারীর বক্তব্যে।
সঙ্ঘের একটি বড় অংশ দীর্ঘ দিন ধরে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার জন্য দাবি করে এসেছে। বিশেষ করে শিক্ষা ও চাকরিতে। সঙ্ঘের একাংশ মনে করে, সংরক্ষণের কারণে সমাজে জাতিভেদ প্রথা যেমন রয়ে গিয়েছে, তেমনি শিক্ষা ও চাকরিতে সমানাধিকারের সুযোগ হারাচ্ছে তথাকথিত উচ্চবর্ণ। পরিবর্তে আর্থিক ভিত্তিতে সংরক্ষণের দাবিতে সরব সঙ্ঘ পরিবার। সরসঙ্ঘচালক হিসাবে ভাগবতকেও তাই একাধিক বার সংরক্ষণ নীতির পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে সরব হতে দেখা গিয়েছে।
এই আবহে আজ গুরুপ্রকাশ পাসোয়ান ও সুদর্শন রামাভদ্রনের লেখা ‘মেকার্স অব মর্ডান দলিত হিস্ট্রি’ বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষেই সওয়াল করেন হোসাবলে। তিনি বলেন, ‘‘যত দিন সমাজের একটি শ্রেণি বৈষম্যের শিকার থেকে যাবেন তত দিন সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজন রয়েছে।’’ হোসাবলের দাবি, তিনি ও তাঁর দল গোড়া থেকেই সংরক্ষণের পক্ষে। কারণ সমাজের এক শ্রেণির মানুষেরা দীর্ঘ সময় ধরে বঞ্চনা ও বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়ে এসেছেন। তাঁর দাবি, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অবদানকে অস্বীকার করে কোনও ভাবেই দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা আধ্যাত্মিক ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। যত দিন পিছিয়ে পড়া সমাজের নেতাদের তথাকথিত উচ্চ শ্রেণির মানুষেরাও নিজেদের নেতা বলে স্বীকার করে নিতে না পারছেন, তত দিন উভয় শ্রেণির মিলন অসম্ভব।
হোসাবলে সমাজের উঁচু ও নিচু শ্রেণির মিলনের উপরে জোর দিলেও, দলিত সমাজের প্রতি উচ্চবর্ণের মনোভাব গত একশো বছরেও পরিবর্তন হয়নি বলে দাবি করেছেন নেহরু মন্ত্রিসভার মন্ত্রী বিহারের জগজীবন রামের নাতনি স্বাতী কুমার। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় একশো বছর আগে জগজীবনকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছিল। আজও দলিতেরা মন্দিরে ঢুকতে পারেন না। উচ্চ
বর্ণের মানুষের বাড়ির সামনে দিয়ে ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে যেতে পারেন না। অলিম্পিক্স হকিতে দলিত মহিলারা অংশ নিয়েছেন বলে ভারতের হারে বাজি ফাটান উচ্চ বর্ণের প্রতিনিধিরা।’’