Balasore

Cyclone Yaas: ‘খালি ভাবছিলাম, ২২ বছর আগের সুপার সাইক্লোনের মতো যেন না হয়!’

সন্ধ্যা ৬টা বাজে। ঝড়ের তীব্রতা কমেছে। তবে ঝড়-বৃষ্টি চলছেই। ঘরবন্দি হয়েই সব বলছি। বাস্তবে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বলতে পারব বাইরে বেরোলে।

Advertisement

বিজয় অধিকারী

বালেশ্বর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ১৮:২৩
Share:

গত সোমবার থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে বালেশ্বরে।

২২ বছর আগে ওড়িশার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল সুপার সাইক্লোন। তখন আমার বয়স মাত্র ৪। সে দিনের কথা আমার কোনও ভাবেই মনে নেই। একটু বড় হয়ে সেই বিপর্যয়ের নানা ছবি, ভিডিয়ো দেখেছি। ফলে পরোক্ষে হলেও, সাইক্লোনের একটা ভয়াবহ ছবি সেই সময় থেকেই আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। তবে বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের তেজ স্বচক্ষে দেখলাম।

আমি থাকি বালেশ্বেরের গোপালগাঁও এলাকায়। এখানে আমার কেবলের ব্যবসা। গত কয়েক দিন ধরেই খবরে শুনছি, ঝড় আসছে। কিন্তু ঠিক কোথায় তা আছড়ে পড়বে তা নিয়ে নানা সময়ে নানা তথ্য পাচ্ছিলাম। মনে মনে একটা দোলাচল ছিলই।

এখানে মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকেই বিদ্যুৎ নেই। সতর্কতার জন্য প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মনে মনে একটা আশঙ্কা নিয়েই ঘুমাতে গিয়েছিলাম। গত সোমবার থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে বালেশ্বের। সঙ্গী ছিল ঝোড়ো হাওয়াও। কিন্তু ঝড়ের দাপটে আজ ঘুম ভাঙল ভোর ৫টায়। এর পর একটু একটু করে বাতাসের বেগ বাড়তে থাকল। বেলা ১১টার পর মনে হল, আশপাশের গাছগুলো সব ভেঙে পড়বে। ঘরের জানালা বন্ধ। কিন্তু বাইরে তখন প্রবল গজরাচ্ছে ইয়াস। তার পর থেকে মাঝের কয়েক ঘণ্টা কী ভাবে যে কেটেছে জানি না!

আমার তো ঘরে বসেই ভয় করছিল। জানি না, যাঁরা বাইরে ছিলেন তাঁরা কী অবস্থায় ছিলেন। এখানে এক জনের মৃত্যু হয়েছে শুনলাম। যাঁরা আর্থিক ভাবে দুর্বল, তাঁরা কষ্টে আছেন। অনেক মানুষকে সরানো হয়েছে। ফ্লাড সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। শহরের অসংখ্য পুরনো গাছও ভেঙে গিয়েছে। বাড়ির আশপাশে জল জমে গিয়েছে। বাইরে বেরনো যাচ্ছে না।

শহরের ভিতরে বুড়াবালঙ্গা নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। চাঁদিপুরের বন্ধুরা ফোনে বলছে, সমুদ্রের এমন ঢেউ কেউ আগে দেখেনি। এখন নানা জায়গায় উদ্ধারকাজ শুরু করেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। ভেঙে পড়া গাছ কেটে সরানো হলে তবে বিদ্যুৎ আসবে। বিদ্যুৎ এলে বোঝা যাবে আমাদের ব্যবসায় কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। বুঝতে পারছি, অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়তো হবে।

এখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে। ঝড়ের তীব্রতা কমেছে। তবে ঝড়-বৃষ্টি চলছেই। ঘরবন্দি হয়েই সব বলছি। বাস্তবে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বলতে পারব বাইরে বেরোলে। ঝড়ের সময় ভয় লাগছিল। খালি মনে করছিলাম, ১৯৯৯-এর মতো যেন না হয়। এর আগে ফণী হয়েছিল। তবে সেটা পুরী, ভুবনেশ্বরে প্রভাব ফেলেছিল। আমি ছোটবেলা থেকে এই শহরে বেড়ে উঠেছি। এখন আমার বয়স ২৫। এটুকু বলতে পারি, আজ পর্যন্ত যত ঝড় হয়েছে, এমনটা দেখিনি।


(লেখক বালেশ্বরের কেবল ব্যবসায়ী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement