রেমালের জেরে ধসে পড়া পাথর খাদানে চলছে উদ্ধারকাজ। মঙ্গলবার আইজ়লে। ছবি: পিটিআই।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে ঝড়বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর-পূর্ব ভারত। মিজ়োরাম ও মণিপুরের বিভিন্ন অংশে ধস নেমে ও হড়পা বানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মিজ়োরামে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৭টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। অসমে মৃতের সংখ্যা অন্তত ৫। মিজ়োরামে নিখোঁজ ১০ জন, অসমে এক জন। ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে ত্রিপুরায়। সে রাজ্যে প্রায় ২৩৪ কিলোমিটার লাইনে বিদ্যুৎ নেই। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ত্রিপুরা, মিজ়োরাম ওঅসমের বরাক উপত্যকার মধ্যে। মিজ়োরাম-মণিপুরের মধ্যেও জাতীয় সড়ক বিচ্ছিন্ন।
রেমালের ধাক্কায় আইজলের মেলথাম এলাকার একটি পাথর খাদানে ধস নেমে অন্তত ২৪ জম কর্মী চাপা পড়েন। এখনও পর্যন্ত ১৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও ৭-৮ জন নিখোঁজ। হ্লিমেন এলাকায় বাড়ি ধসে বাসিন্দারা জলে ভেসে যান। ৪ জনের মৃতদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সালেমে বাড়ি ধসে ৩ জনের মৃত্যু হয়। ফালকাওনেও হড়পা বানে ভেসে যাওয়া ২ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া লুংসেই ও কেলশিতে এক জন করে এবং আইবাওকে ২ জনের মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।
মিজ়োরামের মুখ্যমন্ত্রী লালডুহোমা জরুরি বৈঠক করেছেন। ত্রাণে ১৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। মৃতদের আত্মীয়দের দেওয়া হবে চার লক্ষ টাকা করে। মণিপুরে কাংপোকপি জেলায় জলের তোড়ে সেতু ভেঙে গিয়েছে। মিজ়োরাম ও মণিপুরের মধ্যে ধস নেমে রাস্তা বন্ধ। মণিপুরের জিরিবামে রাস্তা ধসেছে, উখরুলে বন্যা পরিস্থিতি। বিপর্যস্ত সেনাপতি জেলাও। ইম্ফলের রিমস হাসপাতালের ওয়ার্ডে জল ঢুকেছে।
অসমের ঢেকিয়াজুলিতে বরসলা এলাকায় ঝড়ের দাপটে স্কুলবাসের উপরে গাছ পড়ে জখম হয় ১২ জন ছাত্রছাত্রী। মরিগাঁও জেলায় দিঘলবাড়ি এলাকায় ঝড়ে গাছ উপড়ে অটো ভ্যানের উপরে পড়লে স্কুলছাত্র কৌশিক বরদলৈ ঘটনাস্থলে মারা যায়। পলাশবাড়ির রাজপুখুরিতে গাছ পড়ে মারা গিয়েছেন লাবণ্য কুমারী নামে এক মহিলা। গুয়াহাটির পাঞ্জাবাড়িতে গাছ পড়ে মারা যান কলেজছাত্র মিন্টু তালুকদার। করিমগঞ্জে আমগাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে মারা যায় জাকিয়া বেগম নামে এক শিশু। কাছাড়ে পা পিছলে নদীতে পড়ে নিখোঁজ মুজাম্মিল আলি লস্কর নামে এক প্রৌঢ়। গোগামুখের নামনি সুবনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে টানা বৃষ্টির জেরে ধস নেমে পুতুল গগৈ নামে এক শ্রমিক মারা যান।
গুয়াহাটিতে সোমবার সন্ধ্যা থেকেই বিদ্যুৎ নেই। রাতভর ঝড়ে গাছ পড়ে ও জল জমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। রাজ্য জুড়েই এক অবস্থা। ডিমা হাসাও জেলা তছনছ। রেললাইনে বহু জায়গায় ধস নেমেছে। অনেক জায়গায় ট্র্যাকের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। সুড়ঙ্গের ভিতরেও জল। ফলে সকাল আটটার কিছু পর থেকে গুয়াহাটি-শিলচর সেকশনে আর ট্রেন চালানো যায়নি। অসমের হারাঙ্গাজাওয়ে জাতীয় সড়কের অনেকটা কার্যত দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। মেঘালয় হয়ে বাইরেরসঙ্গে যোগাযোগের রাস্তাতেও বারবার ধস নামছে।
করিমগঞ্জে সিংলা নদীর জল উপচে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে। কাছাড় এবং হাইলাকান্দিতেও বহু বাড়িঘরে জল। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় বুধবারের সমস্ত পরীক্ষা বাতিল করেছে। অসমের ৯টি জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুধবার বন্ধ থাকবে। গুয়াহাটি থেকে আইজল ও শিলচরের বিমান চলাচল বন্ধ। গুয়াহাটি-কলকাতা উড়ানও বাতিল হয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ওড়িশা থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামিকাল রেমালের প্রভাব বেশি পড়বে বরাকে।
ত্রিপুরার ৮টি জেলার মধ্যে ঊনকোটি জেলায় ২৫২.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগরতলা শহরের বেশ কয়েকটি নিচু এলাকা জলমগ্ন। পশ্চিম জেলার দশটি শরণার্থী শিবিরে অন্তত ২৮০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, ঝড়ের প্রকোপে ৬৮৬টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎহীন বলে অভিযোগ উঠছে।