মেঘাচ্ছন্ন: আসছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ। তার আগে কালো মেঘে ঢেকেছে আকাশ। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। ছবি: এপি।
মে মাসের তৃতীয় বুধবারে পূর্ব উপকূলের পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশায় আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আমপান। জুনের প্রথম বুধবার অর্থাৎ আজ আবার একটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে দেশে। ‘নিসর্গ’ নামের সেই ঘূর্ণিঝড়ের হামলার মুখে মহারাষ্ট্র এবং লাগোয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দমন।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডিজি মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র মঙ্গলবার জানান, এ দিন দুপুরে আরব সাগরে জন্ম নিয়েছে নিসর্গ। বুধবার বিকেলের পরে তা মহারাষ্ট্রের আলিবাগ জেলার কাছাকাছি আছড়ে পড়তে পারে। এর ফলে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে ওই উপকূল এলাকায়। তার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ১২০ কিলোমিটার। সমুদ্রের ঢেউ উঠতে পারে ছ’ফুট পর্যন্ত। প্রবল বৃষ্টিরও আশঙ্কা আছে।
করোনা সংক্রমণে মহারাষ্ট্র এমনিতেই কার্যত বিধ্বস্ত। ওই রাজ্যে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। তার উপরে নতুন বিপদ নিয়ে হাজির ঘূর্ণিঝড়। মৌসম ভবনের খবর, প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ওই রাজ্যে আছড়ে পড়তে পারে নিসর্গ।
ঝড়ের ঠিকুজি
নাম: নিসর্গ (নামকরণ বাংলাদেশ)।
সম্ভাব্য নিশানা: মহারাষ্ট্রের আলিবাগ জেলা ও সংলগ্ন এলাকা।
সম্ভাব্য গতিবেগ: ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিমি। সর্বোচ্চ ১২০ কিমি।
প্রস্তুতি: মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে ৩০টি এনডিআরএফ দল মোতায়েন। উপকূলে প্রস্তুত উপকূলরক্ষী বাহিনী। বায়ুসেনা, নৌসেনাও সতর্ক। গুজরাতের দু’টি জেলার ২০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। সরানো হচ্ছে মহারাষ্ট্রের নিচু এলাকা ও মুম্বইয়ের বস্তিবাসীদেরও। মহারাষ্ট্রে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ‘নন-কোভিড’ হাসপাতালগুলিকে।
২০ মে পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবন এলাকায় আছড়ে পড়েছিল অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপান। ২০০৪ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের যে-নামকরণ শুরু হয়, তার প্রথম তালিকার শেষ নাম ছিল তাইল্যান্ডের দেওয়া আমপান। দ্বিতীয় তালিকার প্রথম নাম (নিসর্গ) দিয়েছে বাংলাদেশ। মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘২০০৪ সাল থেকে হিসেব করলে উত্তর ভারতমহাসাগরীয় এলাকায় এটি ৬৫তম ঘূর্ণিঝড়।’’
আরও পড়ুন: ‘অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিয়েছে করোনা’, মোদীর দাবিতে উঠছে প্রশ্ন
আরও পড়ুন: আমপান বঙ্গকে ছাড়েনি, নিসর্গ থেকে বাঁচবে গুজরাত?
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা পেয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত সরকার। উপকূল এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরানো হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে জানান, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-র ১৬টি দল মোতায়েন করা হয়েছে। এ দিন বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে একটি টুইট করে ঝড় আছড়ে পড়তে পারে, এমন সব এলাকার বাসিন্দাদের সব রকমের সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেন তিনি। এনডিআরএফের ডিজি সত্যনারায়ণ প্রধান জানান, ঝড়ের সম্ভাব্য গতিবেগ ততটা ভয়ঙ্কর না-হলেও বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা এবং উদ্ধারের প্রস্তুতিতে কোনও রকম খামতি রাখা হচ্ছে না।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নৌসেনা জানিয়েছে, তাদের ওয়েস্টার্ন কমান্ডের উদ্ধারকারী ও ডুবুরি দল মোতায়েন করা হয়েছে। বর্ষার গোটা মরসুমেই সতর্ক থাকবে নৌসেনা।
কার্যত ১৫ দিনের মধ্যে দেশের দু’দিকে দুই সাগরে দু’টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির জন্য মূলত উষ্ণায়নকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটেরিয়োলজির বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কোল জানান, আমপানের উৎপত্তির সময় বঙ্গোপসাগরে জলের তাপমাত্রা যেমন ছিল (৩০-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস), আরব সাগরেও বর্তমানে তেমনই উষ্ণতা (৩০-৩২ ডিগ্রি) রয়েছে। তার ফলেই নিম্নচাপ থেকে দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছে নিসর্গ এবং আজ, বুধবার সে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে উঠতে পারে।