কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। ফাইল চিত্র।
সংঘাত থামার কোনও লক্ষণ নেই। বরং, আরও চড়ছে! এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের উপরে চাপ বাড়াতে সর্বশক্তিতে ঝাঁপাতে চলেছে সিপিএম। কেরলে শাসক ফ্রন্ট এলডিএফের ডাকে রাজভবন অভিযানে শামিল হতে চলেছেন স্বয়ং সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। পাশাপাশিই রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যপালের কাজকর্মের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভেবে দেখা হচ্ছে।
সিপিএমের অভিযোগ, কেরলে রাজ্যপাল আরিফ আরএসএস এবং বিজেপির ‘হাতের পুতুল’ হিসেবে কাজ করছেন। নিজের ক্ষমতার ‘অপব্যবহার’ করছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘অস্থিরতা’ তৈরি করতে চাইছেন। রাজ্যপালের আচরণ যে গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মানানসই নয়, জনদরবারে সেই বার্তা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সিপিএম। তারই অঙ্গ হিসেবে আগামী ১৫ নভেম্বর রাজভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে রাজ্যপাল আরিফের নতুন আর এক পদক্ষেপের জেরে আরও কোমর বেঁধে নামতে চাইছেন ইয়েচুরি, এম ভি গেবিন্দনেরা।
দিল্লি সফরে গিয়ে রাজ্যপাল আরিফ এ বার কেরলের বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিয়েছেন। রিপোর্ট পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। রাজ্যপালের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন আনুষ্ঠানিক ‘সম্মতি’ না নিয়ে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বিদেশে থাকাকালীন সরকার পরিচালনার কী ব্যবস্থা ছিল, তা-ও রাজ্যপালকে জানানো হয়নি। বিদেশে যাওয়ার আগে সচরাচর মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন রাজভবনে ঘুরে যান। কিন্তু প্রবল সংঘাতের আবহে সম্প্রতি ইউরোপে সরকারি সফরে যাওয়ার আগে তিনি আর রাজভবনে যাননি। ইউরোপ থেকে আরব আমিরশাহিতে কয়েক দিন থেকে ফেরার পরেও রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাননি। রাজ্যপাল তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
সিপিএম অবশ্য মনে করছে, রাজ্যপাল ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবেই বিতর্ক তৈরি করছেন। দলের কেরল রাজ্য সম্পাদক গোবিন্দনের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালকে মন্ত্রিসভার পরার্মশ নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু এই রাজ্যপাল আরএসএসের পরামর্শে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাঙার চেষ্টা করছেন। গোটা রাজ্যের মানুষ তাঁকে বুঝিয়ে দেবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না!’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের হাতে ক্ষমতা থাকার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, তা-ও ভেবে দেখার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন গোবিন্দন। ঠিক হয়েছে, রাজ্যপালের ভূমিকার প্রতিবাদে আগামী ১৫ তারিখ তিরুঅনন্তপুরমে ‘জনসচেতনতা যাত্রা’র সূচনা করবেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি। তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপে ইতিমধ্যেই সম্মতি দিয়েছেন ডিএমকে-র সভাপতি ও সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, ইয়েচুরি, কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম এবং সিপিআইয়ের ডি রাজা। কেরলে রাজভবন অভিযানেও ডিএমকে-র রাজ্যসভার নেতা তিরুচি শিবাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিএম। গোবিন্দনের বক্তব্য, ওই দিনই জেলায় জেলায় বড় আকারে পথে নামা হবে।
লোকায়ুক্ত সংশোধনী, বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনী-সহ বেশ কিছু বিলে সম্মতি না দিয়ে আটকে রেখেছেন রাজ্যপাল আরিফ। রাজ্যপাল যে ভাবে প্রতি পদে রাজ্য সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা এবং নানা পদক্ষেপ করছেন, তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার পরামর্শও নিচ্ছে বিজয়নের সরকার। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক গোবিন্দনের মতে, রাজ্য সরকার যেমন আইনি পথ খতিয়ে দেখছে, তেমনই তাঁরা রাজ্যপাল-প্রশ্নে রাস্তায় নামছেন। আবার শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক-সহ বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গড়ে তোলা ‘উচ্চ শিক্ষা সুরক্ষা পরিষদ’ও প্রচারে নামবে শিক্ষা ক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরের ‘দুরভিসন্ধি’ সম্পর্কে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের পাল্টা অভিযোগ, সিপিএমই রাজ্যপালকে ‘চোখ রাঙাতে’ চাইছে। বাম সরকার আইনের শাসন মানছে না, এই অভিযোগে বিজেপি পাল্টা প্রতিবাদে নামবে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর।