কংগ্রেসের সঙ্গে হাত না মেলালে কেন চলছে না? নিজেদের সংগঠনে জোর নেই, তা-ই!
সংগঠন মজবুত করতে কলকাতা প্লেনামের সিদ্ধান্ত কেন কার্যকর হচ্ছে না? তৃণমূলের হিংসার জন্য।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের এই বরাবরের যুক্তি মেনে দেশ জুড়ে তৃণমূলের হিংসা নিয়ে প্রচারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএমের পলিটব্যুরো।
এমন প্রচার তো আগেও হয়েছে। নতুন কী? নতুন হল, পশ্চিমবঙ্গের নেতারাই এ বার রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে বলবেন, তৃণমূল কী ভাবে দলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করছে। বিধানসভা ভোটের আগে তো বটেই, ভোটের পরেও সেই হিংসা থামছে না। শনি ও রবিবার, দু’দিনের পলিটব্যুরোর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্য কমিটি তৃণমূলের হিংসার বিরুদ্ধে প্রচার কর্মসূচি তৈরি করবে। সেখানে আলিমুদ্দিন থেকে এক জন করে নেতা গিয়েই রাজ্যের পরিস্থিতির কথা বলবেন। আগামী সপ্তাহেই যেমন দিল্লি রাজ্য কমিটি তৃণমূলের হিংসার বিরুদ্ধে জনসভার আয়োজন করছে। যেখানে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির কথা বলবেন পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম।
পলিটব্যুরোর এই সিদ্ধান্তের পরে দলের অন্দর মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি আসলে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের কংগ্রেসের হাত ধরার পক্ষে সওয়াল করার সুযোগই করে দিচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি? কারণ, তৃণমূলের হিংসার বিরুদ্ধে লড়তেই কংগ্রেসের হাত ধরা
প্রয়োজন বলে যুক্তি দিয়ে আসছেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা!
ইয়েচুরি শিবির তথা রাজ্যের নেতারা একে যেমন সুযোগ হিসাবে দেখছেন, তেমনই এর সঙ্গে কংগ্রেসের হাত ধরার কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করছে কারাট শিবির। ইয়েচুরি শিবিরের যুক্তি, তৃণমূলের হিংসার বিরুদ্ধে এই কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসও যোগ দেবে। সেই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের নেতারাই অন্য রাজ্যের কমরেডদের বোঝাতে পারবেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি কতটা আলাদা। উল্টো দিকে কারাট শিবিরের যুক্তি, তৃণমূলের হিংসার বিরুদ্ধে কংগ্রেস বা অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন হলেও তা ওইটুকুর মধ্যেই সীমিত থাকবে।
কারাট শিবিরের নিদান, গত বছরের ডিসেম্বরে কলকাতায় প্লেনামে সাংগঠনিক বিষয়ে যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেগুলি রূপায়ণ করুন রাজ্য নেতৃত্ব। ওই প্লেনামে দলের মতাদর্শগত অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, সমাজের সব রকম শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বিভিন্ন বিষয়ে দলের অবস্থান বোঝাতে দলীয় মুখপত্রের প্রচার বাড়ানো, স্থানীয় বিষয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করা, দলের সব স্তরে বিশেষ করে শাখা কমিটিগুলিকে সক্রিয় করার মতো একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তার প্রায় কিছুই কার্যকর হয়নি। আলিমুদ্দিনের নেতারা ভোটের প্রস্তুতির কথা বলে কাটিয়ে দেওয়ার পরে এ বার তা রূপায়ণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে
সেপ্টেম্বরের শেষে রাজ্য পার্টির আলাদা প্লেনামও বসবে। তার পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফের তার পর্যালোচনা হবে।