Girdharilal Mahiya

মুখ্যমন্ত্রীর মাথাব্যথা রাজ্যপাল, বিধায়ক তাড়াচ্ছেন পঙ্গপাল

দু’বছর আগে কংগ্রেস ও বিজেপি, দু’দলের প্রার্থীকে হারিয়েই জিতেছিলেন সিপিএমের গিরধারীলাল।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ০২:০২
Share:

খেতে পঙ্গপালের সঙ্গে লড়াইয়ে গিরধারীলাল মাহিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

মরু-রাজ্যেও বৃষ্টি হয়। কিছু শহুরে এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। খবর পেলে দৌড়ে যান তিনি। জলে ডোবা রাস্তায় দাঁড়িয়েই পুরসভার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যেমন করছিলেন রবিবার বেশি রাত পর্যন্ত। অন্য সময়টা তাঁর ক্ষেতে ক্ষেতেই কাটে। এখন লড়াই আবার পঙ্গপাল তাড়ানোর।

Advertisement

রাজস্থানে রাজনৈতিক নাটক এখন তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত এবং বিদ্রোহী নেতা সচিন পায়লটের অনুগামী বিধায়কেরা পাঁচ তারা হোটেলের ঘেরাটোপে বন্দি। রাজভবনের ভূমিকা নিয়ে প্রবল বিতর্ক। শাসক শিবির যখন রাজ্যপালকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, সে রাজ্যের সিপিএম বিধায়ক গিরধারীলাল মাহিয়া তখন কৃষকদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে পঙ্গপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন!

বিকানের জেলার শ্রীডুঙ্গরগড়ে গিরধারীলালের চাষের ক্ষেত আছে। এক দিকে তিনি নিজে ক্ষেতের কাজ করেন আর তার পাশাপাশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে অন্য কৃষকদের সমস্যা শোনেন। গিরধারীলালের মতে, করোনা অতিমারির মধ্যে পঙ্গপালের হামলা কৃষিতে মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। শ্রীডুঙ্গরগড়ে বিধায়কের চেষ্টাতেই পঙ্গপাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের এই গুরুতর সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হেলদোল নেই আর রাজ্য সরকার নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই মরিয়া— আক্ষেপ গিরধারীলালের!

Advertisement

আরও পড়ুন: গ্যাসের ভর্তুকি কেউ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না! রহস্যটা কোথায়?

ক্ষেতের কাজের পাশাপাশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে অন্য কৃষকদের সমস্যা শোনেন রাজস্থানের বিধায়ক সিপিএম বিধায়ক গিরধারীলাল মাহিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

গিরধারীলাল বলছেন, ‘‘টিড্ডি (পঙ্গপালকে তাঁরা যা বলেন) তাড়িয়েই আমরা কৃষকদের নিয়ে সরকারি ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের কী করতে হবে, তা নিয়ে সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই, প্রচারও নেই। যে শস্যের ক্ষতি হচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও ভাবনা-চিন্তা নেই। পাঁচ তারা হোটেলে বসে থাকার জন্য তো বিধায়কেরা ভোটে জিতে আসেননি!’’ গত মাসেই রাজ্যসভা ভোট উপলক্ষে কংগ্রেস এবং বিজেপি বিধায়কদের দল বেঁধে রেখে দেওয়া হয়েছিল রিসর্টে। এখন আবার দল ভাঙানো ঠেকাতে কংগ্রেসেরই গহলৌত ও পায়লট শিবির মিলিয়ে শতাধিক বিধায়কের ঠাঁই পাঁচ তারা হোটেলে। এই কাণ্ড দেখে গিরধারীলাল বলছেন, ‘‘রাজস্থানে ভোটে বড় বিষয় ছিল কৃষকদের সমস্যা। তার পরে এই হাল! বিধানসভা খুললে কৃষকদের কথা সেখানে বলব। রাজ্যের মানুষ এমন তামাশা মেনে নেবেন না!’’

দু’বছর আগে কংগ্রেস ও বিজেপি, দু’দলের প্রার্থীকে হারিয়েই জিতেছিলেন সিপিএমের গিরধারীলাল। সে বার ভাদরা কেন্দ্র থেকে সিপিএমের বিধায়ক হয়েছিলেন কৃষক আন্দোলনের আর এক নেতা বলবন পুনিয়া। গত মাসে রাজ্যসভা নির্বাচনে দলের লাইন ভেঙে কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেওয়ায় বলবনকে এক বছরের জন্য নিলম্বিত করেছে সিপিএম। গিরধারীলাল অবশ্য সে বার ভোট দিতে যাননি। রাজস্থানের বর্তমান সঙ্কটেও কি দুই বিধায়কের ভূমিকা আলাদা? প্রাক্তন বিধায়ক, কৃষক নেতা এবং রাজস্থান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অমরা রামের দাবি, ‘‘একেবারেই তা নয়। এখন আস্থা ভোট হলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে বিধায়ক এবং সকলেই চলবেন।’’

ভূমিকা কী হবে, তার ইঙ্গিত অবশ্য দিয়ে রাখছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপির উদ্দেশ্য, এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতির মধ্যেও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অকেজো করে, ঘোড়া কেনাবেচা করে দল ভাঙানোয় ইন্ধন দিয়ে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা। বিজেপির এই উদ্দেশ্য পূরণ হতে না দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’’

গিরধারীলাল এত দূর ভাবছেন না। তাঁর কথা, ‘‘টিড্ডি সে পরেশান হ্যায় হাম। ইস সে ছুটকারা চাহিয়ে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement