ফাইল চিত্র।
নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে আগামী ৪ অগস্ট দিল্লি আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকটিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে তাঁর। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আসন্ন সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে মমতার। নতুন রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে তাঁর।
এসএসসি-নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে প্রাক্তন শিক্ষা ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি-সহ একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মমতার এই সফর ঘিরে প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের একাংশ। শুক্রবার দিল্লিতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “এত দিন তো মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগই দিতেন না। এমনকি ভিডিয়ো মাধ্যমে হওয়া বৈঠকও এড়িয়ে যেতেন। এখন তিনি দুর্নীতি নিয়ে আঁতাঁত করবেন বলে নীতি আয়োগের বৈঠকে আসছেন। এই গোপন আঁতাঁতের একটা অংশ দার্জিলিং-এ হয়েছে। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দূত তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে অর্ধেক বোঝাপড়া সেরে রেখেছেন। এ বার বাকিটা সারতে আসছেন।”
প্রায় একই সুরে বাংলার কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘আমার ধারণা, এই পরিস্থিতির মধ্যে উনি গোপন আঁতাঁত করতে আসছেন। এর আগে উনি দার্জিলিঙে ধনখড় ও হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে বৈঠকের পরে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার এবং ভোটাভুটিতে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন গোপন আঁতাঁত করতে আসছেন।’’
যদিও বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘মমতা পরিবারকে বাঁচাতে আগেও চেষ্টা করেছিলেন। অতীতে কোনও লাভ হয়নি, এ বারও কোনও লাভ হবে না।’’ যদিও সুজনবাবু জানান, পার্থবাবু সম্প্রতি তাঁর বহিষ্কার প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত সঠিক। সুজনবাবুর কথায়, “পার্থবাবু মমতার উপর এখনও ভরসা রাখছেন একাধিক কারণে। তিনি জানেন, এর আগে নারদ-কাণ্ডে সিবিআই বা ইডি শেষ পর্যন্ত কিছুই করেনি। মাঝে মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গোপনে দিল্লি এসে বৈঠক করেন এবং মোদীর উপরে ভরসা রেখে মমতা এগুলি সামলে নেন। সেটা পার্থবাবু জানেন। সে কারণে তিনি ভরসা রাখছেন। সারদা বা নারদে তদন্ত ঠিক মতো হলে নবান্ন ফাঁকা হয়ে যেত। কিছুই হয়নি। এমনকি সংসদের এথিক্স কমিটিও কিছু করেনি।”
তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া অর্থ না মেটানোর অভিযোগ বহু দিন ধরেই তুলছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রে খবর, নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়ে সেই বিষয়গুলিই তুলে ধরতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও রাজ্যের দাবিদাওয়ার প্রসঙ্গ তুলবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওঠানো হবে একশো দিনের কাজের বকেয়া কেন্দ্রীয় অর্থ রাজ্যকে দেওয়ার দাবিও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মমতার দিল্লি থাকাকালীনই ৬ অগস্ট উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। সূত্রের বক্তব্য, বিরোধীদের মধ্যে যাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে সমন্বয় করছেন তাঁরা এবং এই পদে বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভা নিজেও তৃণমূল নেত্রীকে অনুরোধ করছেন ভোটদানে পক্ষ নেওয়ার জন্য। তাঁরা আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত মমতা বিরোধী ঐক্যের খাতিরে আলভাকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু শুক্রবার শীর্ষ তৃণমূল সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তৃণমূল নেত্রী ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছেন, একবার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তা বদলালে ভুল বার্তা যেতে পারে।
তৃণমূলের একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, আলভাকে ভোট না দিলেও বিরোধী ঐক্যের বার্তা মমতা দেবেন তাঁর দিল্লি সফরে। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, তিনি একদিন সংসদের সেন্ট্রাল হলে যাবেন। কোভিড প্রটোকলের কারণে যে সব বিধিনিষেধ রয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখে তৃণমূল সংসদীয় নেতারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ছাড়পত্র এবং অনুমতি পাওয়ার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন। মমতার সঙ্গে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ঘরোয়া স্তরে বৈঠক হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে বৈঠক হতে পারে অন্য বিরোধী নেতাদেরও।