সঙ্ঘ রুখতে সিপিআইয়ের হাতে এ বার বেদ-পুরাণ

প্রশ্ন উঠছে কেরলে। কারণ, সে রাজ্যের কমিউনিস্টরা বেদ, উপনিষদ, পুরাণ এবং রামায়ণ, মহাভারতের মতো মহাকাব্য নিয়ে আলোচনার আসর বসাচ্ছেন।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

ধর্মগ্রন্থ বা পুরাণের সঙ্গে কার্ল মার্ক্সের ভাবনার দূরত্ব অসেতুসম্ভব! এমনই ভেবে আসা হয়েছে এত দিন। কিন্তু ‘রাম-রাজত্বে’র প্রবল দাপটে পুরনো সব ছুৎমার্গ রাখার দিন কি শেষ হয়ে এল!

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে কেরলে। কারণ, সে রাজ্যের কমিউনিস্টরা বেদ, উপনিষদ, পুরাণ এবং রামায়ণ, মহাভারতের মতো মহাকাব্য নিয়ে আলোচনার আসর বসাচ্ছেন। সরাসরি কোনও দলের পতাকার নীচে না হলেও ওই আলোচনা-সভার উদ্যোক্তা যে সংগঠন, তারা সিপিআইয়ের হাতে পরিচালিত। কান্নুরে ওই আলোচনা-সভার উদ্বোধনও করার কথা সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার। তিন দিনের আসরের শেষলগ্নে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকেও। বামপন্থী সংগঠনের এমন উদ্যোগে যেমন নানা মহলের ভ্রূ কুঞ্চিত হচ্ছে, তেমনই কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি শিবির!

কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ? সিপিআইয়ের কেরল রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, এই আলোচনার সঙ্গে ধর্ম- চর্চা বা সঙ্ঘ ঘরানার কোনও যোগ নেই। উদ্দেশ্য রাজনৈতিক হলেও উদ্যোগটির ধরন শিক্ষাগত। পুরাণ এবং মহাকাব্যের মধ্যে যে মূল্যবোধ ও নীতিশিক্ষা আছে, তাকে এখন ভুল ব্যাখ্যা করে অসৎ উদ্দেশ্যে সঙ্ঘ পরিবার ব্যবহার করছে বলে সিপিআই নেতৃত্বের অভিযোগ। সেই প্রবণতাকেই তাঁরা ধরিয়ে দিতে চান এমন আলোচনার আসর থেকে।

Advertisement

কান্নুরে আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ‘ভারতীয়ম ২০১৯’ শীর্ষক তিন দিনের ওই আলোচনায় বেদ, উপনিষদ, বিভিন্ন পুরাণ ও মহাকাব্যের উৎপত্তি, ভাযা, সংস্কৃতি বা বৈজ্ঞানিক ভাবনা— এমন নানা দিকের উপরে ৯টি ‘পেপার’ থাকবে। আলোচনা করবেন শিক্ষক ও গবেষকেরা। বেদ ও খ্রিস্টান বিশ্বাস, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও সুফি ভাবনার উপরে থাকবে আলাদা আলোচনার ব্যবস্থা। নাম নথিভুক্ত করিয়ে উৎসাহীরা আলোচনা-সভায় যোগ দিতে পারেন।

কেরল সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক কানম রাজেন্দ্রনের বক্তব্য, ‘‘বেদ, উপনিষদ বা পুরাণ কোনও সংগঠনের সম্পত্তি নয়! আরএসএস যেমনই দাবি করুক না কেন। পৃথিবীর যেখানে যা ঘটছে, সবই পুরাণে বলা আছে বলে দাবি করে চলেছেন আমাদের বর্তমান শাসকেরা। এই আলোচনা-সভায় ভাবাবেগ বর্জিত ভাবে দেখানোর চেষ্টা হবে, পুরাণের শিক্ষা বা মূল্যবোধকে কী ভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের পুরনো নেতারা এই বিষয়ে কী অবস্থান নিয়েছিলেন, সেই আলোচনাও থাকবে।’’ রাজেন্দ্রনের দাবি, ধর্মীয় নয়, বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আলোচনা হবে।

বিজেপি নেতারা অবশ্য এই সুযোগে বামেদের বিঁধতে ছাড়ছেন না। কেরলের কান্নুর জেলার রাজনৈতিক ইতিহাস এমনিতেই বামেদের সঙ্গে সঙ্ঘের সংঘর্ষের পরিসংখ্যানে রক্তাক্ত। বিজেপির কেরল রাজ্য সভাপতি পি শ্রীধরন পিল্লাইয়ের মন্তব্য, ‘‘কমিউনিস্টরাও বুঝতে পারছেন, ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে সরে গিয়ে মানুষের মন থেকে তাঁরা মুছে যাচ্ছেন। এখন হিন্দুদের সমর্থন পুনরুদ্ধার করার জন্য বেদ, উপনিষদ নিয়ে বসছেন!’’ সিপিআইয়ের কান্নুর জেলা সম্পাদক, পেশায় আইনজীবী পি সন্তোষ কুমারের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘একটা সেমিনার করলেই লোকে এসে ভোট দিয়ে যাবে, এটা জানা ছিল না!’’ এন ই বলরাম ট্রাস্টের আয়োজনে ওই আলোচনায় বিজেপি বা গেরুয়া শিবিরের কাউকে ডাকা হচ্ছে না বলেও উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement