কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী এবং সিপিআই নেতা সত্যন মোকারি। —ফাইল ছবি।
ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার বিরুদ্ধে প্রাক্তন বিধায়ক সত্যন মোকেরিকে প্রার্থী করছে সিপিআই। ওই কেন্দ্রে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন সত্যন। তিনি কেরল রাজ্য সিপিআইয়ের রাজ্য সহ-সম্পাদক। দলের রাজ্য রাজ্য কর্মসমিতি সত্যনের নাম ঠিক করেছে। এর পরে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দেবে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্ট এলডিএফ।
একই সঙ্গে রায়বরেলী ও ওয়েনাড় থেকে সাংসদ হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। রায়বরেলী রেখে দিয়ে ওয়েনাড়ের সাংসদ-পদ থেকে রাহুল ইস্তফা দেওয়ায় সেখানে উপনির্বাচন হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। সিপিআইয়ের মতো বিজেপিও সম্ভবত উপনিবার্চনে প্রার্থী বদল করতে চলছে। সূত্রের খবর, ওয়েনাড়ের জন্য প্রার্থী তালিকায় নাটকীয় ভাবে উঠে এসেছে অভিনেত্রী খুশবুর নাম। দক্ষিণী অভিনেত্রী খুশবু ডিএমকে হয়ে বিজেপিতে এসেছিলেন, পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুতেই তিনি রাজনৈতিক কাজকর্মে যুক্ত। তাঁকে ওয়েনাড়ে প্রিয়ঙ্কার বিরুদ্ধে প্রার্থী করে চমক দিতে পারে বিজেপি। সম্ভাব্য তালিকা থেকে চূড়ান্ত নাম বেছে নেবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি ও সংসদীয় বোর্ড।
গত এপ্রিলে লোকসভা নির্বাচনে ওয়েনাড়ে রাহুলের বিরুদ্ধে সিপিআইয়ের প্রার্থী ছিলেন দলের জাতীয় স্তরের নেত্রী অ্যানি রাজ়া। সিপিআই সূত্রের খবর, অ্যানি উপনির্বাচনে আর প্রার্থী হবেন না বলে দলকে আগেই জানিয়েছিলেন। সিপিআইয়ের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে ওয়েনাড়ের প্রার্থী হিসেবে বিধায়ক ই এস বিজিমোল এবং অ্যানির মেয়ে অপরাজিতার নাম নিয়েও আলোচনা হয়েছে। শেষে বেছে নেওয়া হয়েছে সত্যনকে। কংগ্রেস ও সিপিআই দু’দলই ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক হলেও কেরল রাজনীতিতে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে উপনির্বাচনে প্রিয়ঙ্কার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্নে দোলাচল ছিল। লোকসভায় অ্যানি দু’লক্ষ ৮৩ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। বাম নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, তাদের কোনও প্রার্থী না-থাকলে কংগ্রেস-বিরোধী ভোটের একাংশ বিজেপির দিকেও চলে যেতে পারে। রাহুলের বিরুদ্ধে অ্যানি যা ভোট পেয়েছিলেন, উপনির্বাচনে সেই ভোট যদি না-ও ধরে রাখা যায়, যতটা ভোট থাকবে, তাতেও বামেদের স্বস্তি। বিজেপিকে সুবিধা না-দেওয়ার যুক্তিতেই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দলের সিদ্ধান্তের পরে সিপিআই নেতা সত্যন অবশ্য বলেছেন, ‘‘ভোটে কী হবে, কেউ কি বলতে পারে? ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন, রাহুল গান্ধীও হেরেছেন। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী অপরাজেয়, এটা ধরে নিয়ে আমরা লড়াই করতে নামছি না!’’ লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে ওয়েনাড় আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে কংগ্রেসের জন্য ‘নিরাপদ আসন’ হলেও সম্প্রতি ভয়াবহ ভূমিধসের পরে রাজ্যের বাম সরকারের কাজ মানুষের আস্থা বাড়িয়েছে বলে বাম নেতৃত্বের আশা।
উপনির্বাচন ঘিরে অন্য চমকও দেখা যাচ্ছে কেরলের রাজনীতিতে। কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের ডিজ়িটাল শাখার আহ্বায়ক পি সারিন দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তাঁর তোপ, বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশন নিজের স্বার্থ দেখতে গিয়ে কংগ্রেসকে ডোবাচ্ছেন। পালাক্কড বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস সারিনকে প্রার্থী করেনি, সেই সময়েই তাঁর অভিযোগ হইচই ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে পালাক্কডের উপনির্বাচনে সারিনকে নির্দল প্রার্থী করে তাঁকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম! সমাজমাধ্যমে কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের বিভিন্ন পোস্ট গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবিরে সমাদৃত। তাদের ডিজ়িটাল শাখার আহ্বায়কের বিদ্রোহ এবং সিপিএমের সমর্থন নতুন চর্চার কারণ হয়েছে।