গোবর থেকে তৈরি সেই চিপ দেখাচ্ছেন বল্লভভাই কাঠেরিয়া।
গোবর থেকে তৈরি চিপ মোবাইলের বিকিরণ ঠেকাবে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকেও মানুষকে নিরাপদে রাখবে ওই বিশেষ চিপ। এমনই আজব দাবি করে বসলেন রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ (আরকেএ)-এর চেয়ারম্যান বল্লভভাই কাঠেরিয়া। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার দেশ জুড়ে ‘কামধেনু দীপাবলি অভিযান’-এর সূচনা করেন কাঠেরিয়া। তিনি গোবর থেকে তৈরি সেই চিপও দেখান। বলেন, ‘‘গোবর সকলকে রক্ষা করবে। কারণ এটা বিকিরণ প্রতিরোধকারী। এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’’ ওই বিশেষ চিপ হাতে নিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘‘এই চিপটা বিকিরণ ঠেকানোর জন্য মোবাইলে ব্যবহার করা যাবে। এটা রোগব্যাধি থেকে নিরাপদে রাখবে।’’
গোবর থেকে তৈরি করা ওই বিশেষ চিপটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘গৌসত্ত্ব কবচ’। রাজকোটের শ্রীজি গোশালায় তৈরি হয়েছে চিপটি। ২০১৯ সালে গোসম্পদের সংরক্ষণ, উন্নয়নের দিকে নজর রেখেই ওই গোশালাটি তৈরি করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মৎস্যচাষ, পশুপালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন মন্ত্রকের আওতায় রয়েছে আরকেএ। গোবর থেকে তৈরি করা নানা পণ্য নিয়ে দেশ জুড়ে প্রচার শুরু করেছে ওই আয়োগ।
আরও পড়ুন: আগামী বছরেই একাধিক করোনা টিকা, জানালেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী
আরও পড়ুন: কোভিড আক্রান্ত গৃহকর্তা, কাজ করতে না চাওয়ায় বেতন না দেওয়ার হুমকি, থানায় গেলেন পরিচারিকা
আরকেএ-র এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত? কাঠেরিয়ার মন্তব্যকে ঘিরে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘গল্পের গোরু গাছে তোলা হচ্ছে। মোবাইল বিকিরণ আটকে দেওয়ার যে দাবি করা হচ্ছে তা আদতে সম্ভব নয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘গোবরে সিসা, নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট এবং দস্তার মতো ধাতুর উপস্থিতি খুব কম। সাধারণত ওই ধাতুর মাধ্যমেই বিকিরণ রুখে দেওয়া যায়। কিন্তু এক লিটার গোবরে সিসা রয়েছে মাত্র ৫ মিলিগ্রাম। ফলে সেই গোবর থেকে চিপ তৈরি করে মোবাইলের বিকিরণ আটকে দেওয়া কষ্টকল্পনা মাত্র। কারণ এতে মেটালিক ফিল্ড বা ধাতুর ঢাল তৈরি করাই সম্ভব নয়। যদি একটা বড় দেওয়াল তৈরি করা হয় তবে বিকিরণ কিছুটা আটকানো যাবে। কিন্তু সেই বিশেষ দেওয়াল মোবাইলে ব্যবহার করা অসম্ভব।’’ তাঁর মতে, ‘‘বিকিরণ ঠেকানো গেলে মোবাইলের সিগন্যাল পাওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়বে।’’
এ দিন গোবর থেকে তৈরি করা চিপের বিশেষ ‘গুণ’ তুলে ধরার পাশাপাশি, দিওয়ালিতে চিনা পণ্য বর্জনের আহ্বানও জানিয়েছেন কাঠেরিয়া। তাঁর দাবি, আরকেএ-র এই প্রচার অভিযান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ভাবনাকেই তুলে ধরছে।