ফাইল চিত্র।
গত বছরের থেকে এ বার অতিমারি পরিস্থিতি কি নিয়ন্ত্রণে এসেছে? এবং এর প্রভাব কি পুজোর অর্থনীতিতে পড়বে? শারদোৎসবের প্রাক্কালে এই সব প্রশ্নই জোরদার হয়ে উঠেছে।
শারদোৎসবের অর্থনীতি নিয়ে শুক্রবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। তাতে বলা হয়েছে, প্রাক্-অতিমারি পর্বে শারদোৎসবের অর্থনীতির মোট পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা, যা রাজ্যের জিডিপির ২.৫৮ শতাংশ। এই অর্থের সিংহভাগই খুচরো বাজারের। এ ছাড়াও রয়েছে খাদ্য ও পানীয়, মণ্ডপ নির্মাণ, প্রতিমা শিল্প, বিজ্ঞাপন, আলোকশিল্প, সাহিত্য এবং প্রকাশনা জগৎ, পর্যটন...। অতিমারি এই সব ক্ষেত্রেই বড় ধাক্কা দিয়েছে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা যাবে কি না, সেই বিষয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিপোর্ট অনুযায়ী শারদোৎসবে খুচরো বাজারের মোট পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। তারা সমীক্ষা করে দেখেছে, অন্যান্য মাসের তুলনায় উৎসবের মাসে জামাকাপড়, গয়না বা বৈদ্যুতিন পণ্যের বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হত। তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মূলত শ্রমজীবী শ্রেণি এবং নিচু তলার কর্মীরা এই সময়ে বোনাস পায় এবং সেই টাকা খুচরো বাজারে খরচ করে। পুজোয় কেনাকাটার পিছনে আবেগও কাজ করে। অনেকে বলছেন, আবেগ থাকলেও অতিমারি পর্বে শ্রমজীবী শ্রেণি অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে। ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। অজানা ভবিষ্যতের কথা ভেবে মিতব্যয়ের পথে হাঁটছেন অনেকে।
শুধু ক্রেতা নয়, বিক্রেতা এবং উৎপাদকেরাও যে মন্দার শিকার, তা মেনে নিচ্ছেন চাঁদনি চক এলাকার বস্ত্র বিপণির মালিক রহমান সরকার। তিনি বলছেন, প্রাক্-অতিমারি পর্বে বাজার আহামরি না-হলেও পুজোর মাসে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি বিক্রি হত। এ বারেও বিক্রি হয়েছে, তবে আহামরি কিছু নয়। তিনি জানান, ভিন্ রাজ্য থেকে বাংলায় জামাকাপড় আসে। ভিন্ রাজ্যের সংস্থাগুলির উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছে। তা ছাড়া বহু মহাজন আগের মতো ধারে মালপত্র দিতে চাইছেন না। যে-সব খুচরো বিক্রেতার সাধ্য আছে, তাঁরা নগদে মালপত্র এনেছেন। যাঁদের সেই সাধ্য নেই, তাঁরা ব্যবসা থেকেই হারিয়ে যাচ্ছেন। বস্তুত, অন্যান্য বছর পুজোর সময় হাতিবাগান বা গড়িয়াহাটের ফুটপাতের দোকানে যে-বিপুল ভিড় থাকে, এ বার তা চোখে পড়েনি।
কাউন্সিলের রিপোর্ট অনুযায়ী পুজোর মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমা শিল্প, এবং আলোকসজ্জায় যথাক্রমে ৮৬০ কোটি, ২৮০ কোটি এবং ২০৫ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এ বছর সেখানেও মন্দার হাল। উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন পুজো কমিটির সম্পাদক সোমেন দত্ত জানান, ২০১৯ সালের তুলনায় এ বার তাঁদের পুজোর বাজেট এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। স্পনসরের বাজারেও মন্দা রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার এক প্রবীণ পুজোকর্তার মতে, এ বছরেও জাঁকজমক করে পুজো করার সাধ্য আছে অনেকের। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবেই দেদার খরচ করতে চাইছে না কমিটিগুলি। পুজোকর্তারা জানান, মণ্ডপসজ্জার জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সে-দিকে খরচ করতে গিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা কমাতে হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, আগে যেখানে ১০ জন শ্রমিক কাজ করতেন, এখন সেই কাজ সাত জনকে দিয়ে করানো হচ্ছে।
তবে এই আকালেও স্বপ্ন দেখছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাঁরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর পথেঘাটে বেশি মানুষ বেরোবেন। তাই পুজোর কয়েক দিনে খুচরো পণ্য, খাবার, পানীয়ের বিকিকিনিতে কিছুটা হলেও জোয়ার আসতে পারে।
সত্যি তেমনটা হবে কি?