প্রতীকী ছবি।
প্রমাণ হলে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন। কিন্তু সেই সাজার আগেই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু হতে পারে— এই ভয়কেও পাত্তা না দিয়ে কোভিড-পজিটিভ তরুণীকে অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল চালকের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতে কেরলের পাঠানমথিট্টা জেলার এই ঘটনায় পুলিশ থেকে চিকিৎসা মহলে ব্যাপক আলোড়ন পড়েছে। জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেকে শৈলজা। অন্য দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় পাঠানমথিট্টার একটি পরিবারের দুই মহিলার কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট আসে। সম্প্রতি কেরল সরকার একটি নির্দেশিকায় জানায়, শুধুমাত্র অ্যাম্বুল্যান্সের এক জন চালকই কোভিড রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করতে পারবেন। সেই মতো শনিবার মধ্যরাত নাগাদ ওই পরিবারের দুই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য ওই চালক একাই গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য প্রশাসনের নির্দেশ মতো প্রথমে এক জনকে নিয়ে গিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে দ্বিতীয় মহিলাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সে তোলেন। মাঝপথে একটি নির্জন জায়গায় অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে বছর বাইশের ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান।
এর পর ওই তরুণী হাসপাতালের চিকিৎসকদের পুরো ঘটনা জানান। সেখানেই তাঁর মেডিক্যাল টেস্টে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালক পরিকল্পিত ভাবে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। আগেও খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক মামলায় অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: রাতের শহরে গাড়ি রুখে তরুণী উদ্ধার দম্পতির, স্ত্রীকে পিষে পালাল অভিযুক্ত
পাঠানমিট্টার পুলিশ সুপার কেজি সিমন বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে পরিকল্পিত ঘটনা। চালক অন্য পথে নিয়ে গিয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স। আমরা সমস্ত তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছি। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে অভিযুক্তের কড়া শাস্তির আর্জি জানানো হবে।’’ আপাতত অভিযুক্তকে কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে। আগামিকাল সোমবার তাঁকে ভার্চুয়াল আদালতে পেশ করা হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই চালককে অস্থায়ী ভাবে কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের মারাত্মক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে নিয়োগ করা হল, তা খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর। অন্য দিকে এই ঘটনার পর স্বাস্থ্য দফতর নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করে বলেছে, অ্যাম্বুল্যান্সে শুধুমাত্র একজন মহিলা রোগী থাকলে এক জন তাঁকে আনতে পারবেন না। ন্যূনতম দু’জন থাকতে হবে। রাজ্যের সব অ্যাম্বুল্যান্স চালকের ব্যক্তিগত তথ্যও চেয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পুলিশের পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরও ঘটনার আলাদা করে তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন: ‘কাউকে ভালবেসে যদি গ্রেফতার হতে হয়, রিয়া সে জন্য প্রস্তুত’
এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। স্থানীয় আর্নামুলা কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক বীণা জর্জ বলেছেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা এড়াতে ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রক উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।’’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী শৈলজা বলেন, ‘‘অমানবিক ঘটনা। না ঘটাই উচিত ছিল।’’ অন্য দিকে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এই ঘটনা রাজ্যের পক্ষে লজ্জাজনক। ঘটনার দায় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।