হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করছেন চিকিৎসকরা। ছবি: পিটিআই
লকডাউন না হলে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এত দিনে ১৫ থেকে ২০ লাখে পৌঁছে যেত। এমনকি মৃতের সংখ্যা হতে পারত ৮০ হাজার পর্যন্ত। তথ্য ও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমনটাই দাবি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর মধ্যেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়েও নতুন আশঙ্কার জায়গাও তৈরি হয়েছে। কারণ তথ্য বলছে, দৈনিক নতুন আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে সারা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ভারত। তার ঠিক আগেই রয়েছে রাশিয়া, ব্রাজিল ও আমেরিকার মতো দেশ, যেগুলিকে করোনার সাম্প্রতিক ভরকেন্দ্র হিসাবেই ধরা হচ্ছে। তবে আশার ব্যাপার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, দেশে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আরও দাবি, সারা বিশ্বে এখনও পর্যন্ত ভারতেই করোনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম।
গত ২৫ মে করোনা সংক্রমণের নিরিখে সারা পৃথিবীতে দশম স্থানে উঠে এসেছিল ভারত। মঙ্গলবারই সারা দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে এক লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৮০। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ দেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ছ’হাজার ৫৩৫ জন। অবশ্য এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বারই এ দেশে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যাটা ছ’হাজারের গণ্ডি স্পর্শ করেছে। তথ্য বলছে, গত ২২ মে থেকে শুরু করে টানা পাঁচ দিন ভারতে দৈনিক ছ’হাজারেরও বেশি মানুষের করোনা ধরা পড়েছে। এই পরিস্থিতিই করোনা সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে আশঙ্কাটা কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের অবশ্য দাবি, সারা দেশ জুড়েই করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। তার জেরে স্বাভাবিক ভাবেই দেশে করোনা রোগীর সংখ্যাও বা়ডছে। আইসিএমআর সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে মোট ৬১০টি ল্যাবরেটরি রয়েছে। সেখানে দৈনিক এক লক্ষেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা চলছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: পঙ্গপালের হানায় কাঁপছে রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর ও মধ্যপ্রদেশ
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আশঙ্কার মেঘ যেমন ঘনিয়ে উঠেছে, তেমনই এর পাশাপাশি আশার খবরও শুনিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মঙ্গলবার মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠার হার এখন আগের থেকে বেড়ে ৪১.৬১ শতাংশ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ১৪৬ জনের। যার জেরে সারা দেশে মৃতের সংখ্যা এখন হয়েছে চার হাজার ১৬৭। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আরও দাবি, এখনও পর্যন্ত দুনিয়ায় ভারতেই করোনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম, তা ২.৮৭ শতাংশ। বলা হয়েছে, দেশে এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু প্রতি এক লক্ষে দশমিক তিন জনের। লকডাউনের ফলেই দেশে করোনায় মৃত্যুর হার কম বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সচিব লব আগরওয়াল।
আরও পড়ুন: করোনা শঙ্কা বেড়েই চলেছে, মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ৪৫ হাজার, মৃত ৪১৬৭
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)