জিডিপি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলের প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন। —ফাইল চিত্র
জিডিপির ঐতিহাসিক পতন। ২৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু সেই পতনের এখানেই শেষ নয়। আরও নামতে পারে আর্থিক বৃদ্ধির হার, বলছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। জিডিপির এই চিত্র ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করে রাজন একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন, যে সব দেশে করোনার সংক্রমণ আরও বেশি, তার চেয়েও ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। সরকার যে ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটা যথেষ্ট নয় বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদ রাজন।
সম্প্রতি কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি সঙ্কোচনের হার ২৩.৯ শতাংশ, যা গত ২৫ বছরে হয়নি। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) প্রায় পুরো সময়টাই দেশ লকডাউনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই আর্থিক বৃদ্ধিতে এমন ভয়াবহ চিত্র। কিন্তু এখন আর্থিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে। গতি এসেছে অর্থনীতিতে। ফলে অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এই হার কিছুটা বাড়তে পারে বা অন্তত এর নীচে আর নামবে না।
কিন্তু রঘুরাম রাজনের মতে তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং আরও নীচে নামতে পারে জিডিপি বৃদ্ধির হার। লিঙ্কড ইন-এ ওই প্রতিবেদনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর লিখেছেন, এর সঙ্গে অসংগঠিত ক্ষেত্রের লোকসান যোগ করে জিডিপি বৃদ্ধির প্রকৃত পরিসংখ্যান প্রকাশিত হলে সেই চিত্র আরও করুণ হতে পারে। অর্থাৎ জিডিপির ঋণাত্মক বৃদ্ধি আরও বেশি হতে পারে। ৫৭ বছরের অর্থনীতিবিদের যুক্তি, ‘‘ভারতে এখনও অতিমারি মারাত্মক আকারে রয়েছে। তাই বিলাসিতার খরচ, যেমন রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মতো খাতে কম খরচ করবেন মানুষ। ভাইরাস যত দিন থাকবে, এই সব খাতে খরচে রাশ টানবেন সাধারণ মানুষ।’’ তাই অর্থনীতির এই রোগ যে সহজে নির্মুল হওয়ার নয়, তেমনটাই মনে করেন রাজন।
আরও পড়ুন: ফের নতুন সংক্রমণ ৯০ হাজারের বেশি, দেশে ৪২ লক্ষ ছাড়াল আক্রান্তের সংখ্যা
করোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে অর্থনীতির মোকাবিলায় আত্মনির্ভর ভারত অভিযান প্রকল্পে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই প্যাকেজ যথেষ্ট নয় বলেই মত রাজনের। তিনি লিখেছেন, গরিবদের বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া, অতিক্ষুদ্র, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণের বন্দোবস্ত করে সাধারণ মানুষকে যে সুরাহা দেওয়ার চেষ্টা সরকার করেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। অর্থনীতিকে রোগের সঙ্গে তুলনা করে রাজন লিখেছেন, ‘‘আর্থিক প্যাকেজ একটা টনিক ছিল। কিন্তু যখন রোগী মরণাপন্ন, তখন টনিক কাজ করবে না।’’
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সাত নির্বাচনী কমিটি থেকেই বাদ রাজ বব্বর-সহ ‘বিক্ষুব্ধরা’
রাজন মনে করেন, সরকারের আর্থিক সাহায্য ছাড়া অর্থনীতির বৃদ্ধির হারে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ব্রাজিল-আমেরিকার উদাহরণ টেনে তিনি লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। তারা কোভিড-লকডাউন মোকাবিলায় জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ প্যাকেজ ঘোষণা করার পরেও আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তায়। ভারতের সরকারি আধিকারিকদের বিষয়টা নিয়ে ভাবা দরকার।
ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনের ব্যাখ্যা, দেশের অর্থনীতি বিষয়ক আধিকারিকরা মনে করছেন, আরও এক দফা আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা দরকার। কারণ সরকার আর্থিক চাপে রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের নিরাশাবাদী মানসিকতা আরও ক্ষতিকারক বলে মনে করে তিনি।
তা হলে উপায়? রাজন বলছেন, ‘‘সরকারের উচিত সুচতুর ভাবে খরচ করা, যাতে অর্থনীতিতে সদর্থক গতি আসে। সরকারের এমন সব পদক্ষেপ করা উচিত যাতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।’’