পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উত্তাল সংসদ। ছবি: পিটিআই।
সংসদে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দফার শুরুতেই হুলস্থুল সংসদে। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এমন কাণ্ড হল শুরুতেই, যে রাজ্যসভার অধিবেশন সকালে শুরু হওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে মুলতুবি করে দিতে হল। সভার শুরুতে কংগ্রেসের সাংসদরা পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সংসদে বিতর্কের জন্য স্লোগান দিতে থাকেন। তবে পেট্রোপণ্য এবং রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সব চেয়ে বেশি সরব যে দল, সেই তৃণমূল এই অধিবেশনে সাময়িক বিরতি চেয়েছিল। চিঠি লিখে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন জানান, ভোটপ্রচারের জন্য তৃণমূলের বেশিরভাগ সাংসদই এখন বাংলায়। তাই আপাতত এই অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করা হোক। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।
গত কয়েক দিনে সামান্য স্থিতাবস্থায় থাকলেও পেট্রল, ডিজেল এবং রান্নার গ্যাসের দাম লাফিয়ে বেড়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে বিরোধী দলের অনেক নেতানেত্রীকেই। সোমবার কলকাতায় পেট্রলের দাম ৯১.৩৫, ডিজেলের দাম ৮৪.৩৫। রান্নার গ্যাসের দাম ৮৪৫.৫০ টাকা। কম বেশি একই অবস্থা দেশের অন্য শহরগুলির। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ই-স্কুটারে নিজের বাড়ি কালীঘাট থেকে নবান্ন রওনা হয়েছিলেন। রবিবার কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড সমাবেশের দিন মমতা উত্তরবঙ্গ সফরে হাতিয়ার করেন পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকেই। সেখানে গ্যাসের সিলিন্ডারের কাট আউট নিয়ে মিছিল করেন। তার পর এই হারে দাম বাড়া নিয়ে সরাসরি বেঁধেন মোদীকে। সোমবার সংসদের অধিবেশনের শুরুতেই দেখা গেল বিরোধীদের কণ্ঠেও রান্নার তেল ও গ্যাসের দাম বাড়া নিয়ে প্রতিবাদের এক সুর। যার জেরে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম বেঙ্কাইয়া নায়েডুকে বলতে হল, ‘‘প্রথম দিনই আমি কোনও চরম পদক্ষেপ করতে চাই না।’’
তার আগে অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, বাকি বিষয় বাদ রেখে শুধু পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েই আলোচনা হোক। তাঁর কথায়, ‘‘আজ দেশের কোথাও প্রতি লিটার পেট্রল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা প্রতি লিটারে। ডিজেলের দামও ৮০টাকা প্রতি লিটার ছাড়িয়েছে। দাম বেড়েছে এলপিজিরও। ২০১৪ থেকে ২১ লক্ষ কোটি টাকা শুধু আবগারি শুল্ক হিসাবে সরকার নিয়েছে। এর জন্যই উত্তরোত্তর দাম বাড়ছে পেট্রল-ডিজেল এবং রান্নার গ্যাসের। গোটা দেশ এর জন্য ভুগছে।’’ কিন্তু মল্লিকার্জুনের দাবি নস্যাৎ করে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।
ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি।
বাংলা, তামিলনাড়ু, কেরল, অসম এবং পুদুচেরিতে বিধানসভা নির্বাচন সামনেই। তাই তৃণমূলের দুই সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা এবং রাজ্যসভার কর্তৃপক্ষকে জানান, নির্বাচনের জন্য আপাতত স্থগিত রাখা হোক সংসদ অধিবেশন। ডেরেক চিঠিতে লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন সামনে। তাই সংসদের এই অধিবেশনে তৃণমূল সাংসদরা উপস্থিত থাকতে পারবেন না।’ সুদীপের চিঠির বয়ানও মোটের উপর এক। তিনিও এই কারণে সংসদের অধিবেশন আপাতত মুলতুবি ঘোষণা করার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।