রাস্তাতেই পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর স্প্রে করা হচ্ছে উত্তরপ্রেদেশে। —ফাইল চিত্র
লকডাউন ঘোষণার পর উত্তরপ্রদেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর জীবাণুনাশক স্প্রে করার ঘটনায় শোরগোল পড়েছিল। রাস্তার উপর গাদাগাদি করে শ্রমিকদের বসিয়ে স্প্রে করেছিল পুলিশ। আবার কেরলে দেখা গিয়েছিল বাইক আরোহীদের লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে। তখন পুলিশের অমানবিক আচরণের নিন্দায় সরব হয়েছিল গোটা দেশ। কিন্তু এ বার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠল ওই সব মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিল, মানুষের শরীরে জীবাণুনাশক ছড়িয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোখা যাবে, এই ধারনার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। শুধু তাই নয়, এটা শারীরিক এবং মানসিক ভাবেও ক্ষতিকর, জানিয়ে দিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এর ফলে দেখা দিতে পারে বমি, চোখমুখ জ্বালা, চুলকানির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ফলে পুলিশের ভূমিকার পাশাপাশি কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে যে ‘জীবাণুনাশক টানেল’ বসানো হয়েছে, তার ভিত্তি নিয়েও দেখা দিল বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সাধারণ মানুষের জন্য করোনাভাইরাস হেল্পলাইন খুলেছে। অনলাইনেও এই সম্পর্কিত প্রশ্ন বা সাহায্যের বিকল্প রয়েছে। সেই সব মাধ্যমেই স্বাস্থ্যমন্ত্রকে মানুষের শরীরে জীবাণুনাশক ছড়ানো সংক্রান্ত প্রচুর প্রশ্ন করেন সাধারণ মানুষ। তার ভিত্তিতেই শনিবার নির্দেশিকা জারি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়ে দিল, ‘‘মানুষের শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে করবেন না।’’
এই স্প্রেতে জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয় সোডিয়াম হাইপোক্লোরিন। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘‘কোনও ব্যাক্তি বা দলের উপর কোনও পরিস্থিতিতেই জীবাণুনাশক স্প্রে করা বাঞ্ছনীয় নয়। কারও উপর এই রাসায়নিক জীবাণুনাশক স্প্রে করলে তাঁর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে।’’
কেন স্প্রে করা উচিত নয়, তার কারণও বিশদে জানানো হয়েছে নির্দেশিকায়। বলা হয়েছে, ‘‘যদি কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয় বা সম্ভাবনা থাকে, তাহলেও তাঁর বাইরের অংশে বা জামাকাপড়ে স্প্রে করে শরীরের ভিতরে ঢুকে থাকা করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করা যায় না। এমনকি, এই ভাবে স্প্রে করে যে শরীরের বাইরে বা জামাকাপড়ে থাকা ভাইরাসকেও পুরোপুরি ধ্বংস করা যায়, এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।’’
আরও পড়ুন: ৩ মে-র পরেও ট্রেন ও বিমান চলার সম্ভাবনা কম: রিপোর্ট
শারীরিক ভাবে নানা রোগের উপসর্গও দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মতে, মানুষের শরীরে স্প্রে করলে চোখ, মুখ-সহ সারা শরীরে চুলকানি, ঝিমুনি ভাব বা বমি হতে পারে। আবার সোডিয়াম হাইপোক্লোরিন নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে মিউকাস ও মেমব্রেন অর্থাৎ গলার ভিতরের কোষগুলিতে তার প্রভাব প্রভাব পড়ে। তার জেরে নাক, গলা, শ্বাসনালিতে চুলকানি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
মানসিক ভাবেও ক্ষতি হতে পারে ওই সব মানুষের, জানাচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কারণ, সাধারণ ধারনা হল, জীবাণুনাশক স্প্রে করা মানে তিনি জীবাণুমুক্ত। তাই ওই ব্যক্তিও নিজেকে নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত মনে করবেন। ফলে করোনার মোকাবিলায় বার বার হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো প্রতিরোধী ব্যবস্থা আর নেবেন না।
সারা দেশে তৈরি হয়েছে এমনই জীবাণুনাশক টানেল।
আরও পড়ুন: উপসর্গহীন আক্রান্ত খুঁজতে এ বার রাজ্যের হাতিয়ার পুল টেস্ট
এই নির্দেশিকার পরেই উত্তরপ্রদেশ-কেরলের ঘটনার কথা স্মরণ করছেন অনেকে। ওই সময় যে ভাবে তাঁদের উপর স্প্রে করা হয়েছিল, তাতে তাঁদের শরীরের ক্ষতিই হয়েছিল। করোনার মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন শহরে জনবহুল এলাকায় স্যানিটাইজিং টানেল বা ডিসইনফেকট্যান্ট টানেল বসানো হয়েছে। কলকাতায় নিউ মার্কেট, রামগড় বাজার, দমদম-সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি টানেল বসানো হয়েছে। তার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় সব দিক থেকে স্বয়ংক্রিয় স্প্রে করা হচ্ছে। তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলেই নাকি জীবাণুমুক্ত হওয়া যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের জারি করা সেই বিজ্ঞপ্তি।
কেন্দ্রের নতুন এই নির্দেশিকার পর সেই টানেলগুলির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে কি ওই টানেলগুলিরও কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তা ছাড়া যে টানেলগুলি বসানো হয়েছে, তাতে কি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল— সামনে আসতে শুরু করেছে এই সব প্রশ্ন।