ছবি এএফপি।
গরিব দেশ, যক্ষ্মা বা টিবি অচেনা নয় ভারতে। জন্মের পরে তাই যক্ষ্মার টিকা দেওয়া হয়ে থাকে এ দেশের লাখো শিশুকে। করোনা-যুদ্ধে সেই দাওয়াই কাজে দিতে পারে বলে মনে করছেন মার্কিন গবেষকেরা। ভারতীয় চিকিৎসক-গবেষকেরা অবশ্য এখনই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে নারাজ। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রমাণ সে ভাবে হাতে নেই।’’
যক্ষ্মা প্রতিরোধে ‘ব্যাসিলাস ক্যালমেট গেরান’ (সংক্ষেপে বিসিজি) ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ১৯২১ সালে প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে প্রতিষেধকটি আবিষ্কার করেন ক্যামিল গেরান ও অ্যালবার্ট ক্যালমেট। ‘নিউ ইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (এনওয়াইআইটি)-র বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এই ভ্যাকসিনের সঙ্গে এক মোক্ষম যোগসূত্র রয়েছে করোনাভাইরাসের। এনওয়াইআইটি-র বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক গঞ্জালো ওতাজ়ু বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি, যে সব দেশে শিশু জন্মের পরে যক্ষ্মার টিকাকরণের ব্যবস্থা নেই, সেই সব দেশে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেশি। যেমন, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, আমেরিকা।’’ এনওয়াইআইটি-র গবেষণাপত্রটি এখনও প্রকাশিত হয়নি।
বিশ্বের যক্ষ্মা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ভারত। ১৯৪৮ সাল থেকে এ দেশে শিশুর জন্মের পরে নিয়ম করে বিসিজি প্রতিষেধক দেওয়া হয়। মার্কিন গবেষকদের দাবিতে আশাবাদী ভারতীয় চিকিৎসক-গবেষকেরা। কিন্তু এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে নারাজ তাঁরা। পঞ্জাবের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির চিকিৎসা-বিজ্ঞান বিভাগের ডিন মণিকা গুলাটির কথায়, ‘‘ছোট ছোট বিষয়গুলো আমাদের আশা জোগাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এখনই জোর দিয়ে বলার মতো কিছু নেই। মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে ভাল কাজ দিচ্ছে বিসিজি। তাঁদের এই দাবি আশার আলো দেখাচ্ছে। ওঁরা এ কথা বলছেন না যে, বিসিজি নেওয়া থাকলে রোগ সেরে যাবে। তাঁরা শুধু আশা করছেন যে এই প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে করোনা-আক্রান্তের হয়তো বাড়াবাড়ি হবে না।’’ করোনাভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি। তাই এই মুহূর্তে অন্য কোনও প্রতিষেধক কাজ দিলে, তা অবশ্যই খুশির খবর। কিন্তু তার আগে বিষয়টি সম্পর্কে আরও ভাল করে জানা প্রয়োজন বলে মনে করেন গাজিয়াবাদের কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের চিকিৎসক দীপক বর্মা। হায়দরাবাদের ‘সিএসআইআর-সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি’-র ডিরেক্টর রাকেশ মিশ্রের কথায়, ‘‘অবশ্যই দারুণ ব্যাপার। কিন্তু এর নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও আমাদের হাতে আসেনি।’’