দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৯২ জন। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান আশা জাগিয়েছিল। দৈনিক নতুন সংক্রমণও গত কয়েক দিন ধরেই ৪৭-৪৮ হাজারের গণ্ডিতেই ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু আজ তা লাফ দিয়ে বেড়ে পৌঁছে গেল ৫২ হাজারে। যদিও এর মধ্যে আশার আলো সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যায়। দেশে ১০ লক্ষেরও বেশি আক্রান্ত ইতিমধ্যেই করোনার কবল থেকে নিজেদের মুক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার ১২৩ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। একদিনে আক্রান্তের নিরিখে যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। এই বৃদ্ধির জেরে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৯২ জন। ১০ লক্ষ ছাড়ানোর পর এই সংখ্যায় পৌঁছতে সময় লেগেছে মাত্র ১৩ দিন।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত সপ্তাহ থেকে উর্ধ্বমুখী থাকার পর গত দু’দিনে এই সংক্রমণের হার নেমেছিল দশ শতাংশের নীচে। বুধবার থেকে তা আবার ১১ শতাংশের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ১১.৬৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পরীক্ষা হয়েছে চার লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৪২ জনের। বুধবারের তুলনায় যা একটু হলেও বেশি।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। প্রতি দিন সুস্থ হয়ে ওঠার হারটাও বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত মোট ১০ লক্ষ ২০ হাজার ৫৮২ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৪.৪৪ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩২ হাজার ৫৫৩ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
মৃত্যুর নিরিখে স্পেন ও ফ্রান্সকে টপকে গেলেও, ভারতে মৃত্যু হার ওই সব দেশগুলির তুলনায় অনেক কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৭৭৫ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৩৪ হাজার ৯৬৮ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১৪ হাজার ৪৬৩ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গিয়েছে তিন হাজার ৯০৭ জনের। তিন হাজার ৭৪১ জনের মৃত্যু নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে তামিলনাড়ু। গুজরাতে দু’হাজার ৩৯৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন করোনার কারণে। বুধবার কর্নাটকে মৃত্যুর সংখ্যা দু’হাজার ছাড়়িয়েছিল। দক্ষিণের এই রাজ্যে মোট মৃত দু’হাজার ১৪৭ জন। উত্তরপ্রদেশ (১,৫৩০), পশ্চিমবঙ্গ (১,৪৯০) ও অন্ধ্রপ্রদেশে (১,২১৩) মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রোজদিন বেড়েই চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৮৪৩), রাজস্থান (৬৫০), তেলঙ্গানা (৪৯২), হরিয়ানা (৪১৩), পঞ্জাব (৩৬১), জম্মু ও কাশ্মীর (৩৪৮), বিহার (২৭৮) ও ওড়িশা (১৫৯)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি।
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্র সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে। বৃহস্পতিবার সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত চার লাখ ছাড়িয়ে গেল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত দু’লক্ষ ৩৪ হাজার ১১৪ জন। জুলাইয়ের শেষ দিকে রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণে বৃদ্ধিতে বেশ খানিকটা লাগাম পড়েছে। সংক্রমণ তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকলেও স্বস্তি দিচ্ছে দেশের রাজধানী। সেখানে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ৩৩ হাজার ৩১০ জন।গত কয়েক দিনে দৈনিক সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে অন্ধ্রপ্রদেশও। কর্নাটকে মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ছাড়িয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজারেরেও বেশি জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন এক লক্ষ ২০ হাজার ৩৯০ জন। কর্নাটকে মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক লক্ষ ১২ হাজার ৫০৪ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
উত্তরপ্রদেশ (৭৭,৩৩৪), পশ্চিমবঙ্গ (৬৫,২৫৮), গুজরাত (৫৯,১২৬), তেলঙ্গানা (৫৮,৯০৬) ও বিহারে (৪৬,০৮০) আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (৩৮,৯৬৪), অসম (৩৬,২৯৫), হরিয়ানা (৩৩,৬৩১), মধ্যপ্রদেশ (৩০,১৩৪), ওড়িশা (২৯,১৭৫), কেরল (২১,৭৯৭), জম্মু ও কাশ্মীর (১৯,৪১৯) ও পঞ্জাব (১৪,৯৪৬)। ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড,
পশ্চিমবঙ্গেও গড়ে দু’হাজার লোকের দৈনিক নতুন সংক্রমণ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে দু’হাজার ২৯৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ৬৫ হাজার ২৫৮ জন। বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন জানালো, গত দু’দিনের তুলনায় সংক্রমণের হার একটু বেড়েছে। পাশাপাশি মৃত্যুর ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে রাজ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। এ নিয়ে এক হাজার ৪৯০ জন করোনার কবলে পড়ে প্রাণ হারালেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)